তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ লিবিয়ায় আজ রাজনীতির
দৃশ্যপট পাল্টেছে। এ পরিবর্তনের পেছনে উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার
(ন্যাটো) সামরিক হস্তক্ষেপ এখন ওয়াকিবহাল মানুষের জানা। ব্রিটেনের
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন বিবিসিকে লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে
সামরিক হামলায় তার দেশের সামরিক ভূমিকা পালনের কথা জানিয়েছেন। ফ্রান্সের লা
ফিগারো পত্রিকা লিবিয়ার ঘটনাবলীকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজির লড়াই হিসেবে
অভিহিত করেছে।
লিবিয়ায় এ যুদ্ধ কেন চালানো হলো সে
প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে। ব্রিটেনের
ইন্ডিপেন্ডেট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে ‘যুদ্ধ-পরবর্তী লিবিয়ায় মুনাফার জন্য
দৌড়ঝাঁপে’র খবর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক
প্রতিবেদনে মন্তব্য করে : লিবিয়ার পশ্চিমা কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের জন্য
মহাউৎসব শুরু হতে পারে। ব্রিটেনের পত্রিকা ইকোনমিস্ট আভাস দেয় : ন্যাটোর
লিবিয়া অভিযানে যে দেশ যতটুকু ভূমিকা পালন করেছে, যুদ্ধ-পরবর্তী পর্বে
লুটের ভাগাভাগিতে তা ভূমিকা পালন করবে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয় :
শত শত কোটি ডলারের তেল আহরণ ও নির্মাণ কাজের ভাগ নেওয়ার মতো অবস্থানে রয়েছে
পশ্চিমা কোম্পানিগুলো। এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা ইকোনমিস্টকে বলেন, লিবিয়ার এ
ঘটনাবলীতে ন্যাটোর সম্পৃক্ত হওয়ার অর্থ দাঁড়াচ্ছে : এটা এখন আমাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউইয়র্ক
টাইমসের আগস্টের শেষ ভাগে একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘দ্য স্ক্র্যাম্বল ফর
একসেস টু লিবিয়াজ অয়েল ওয়েলথ বিগিনস’ ‘বাংলায় এর অর্থ হতে পারে লিবিয়ার তেল
সম্পদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু’। এ খবরে বলা হয় : লিবিয়ার বিদ্রোহীরা
রাজধানী ত্রিপোলির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেছেন, লিবিয়ায় ইতালির তেল কোম্পানি এনির ভূমিকা হবে সবার আগে। মন্ত্রীর
বক্তব্য থেকে প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, লিবিয়ার তেলসম্পদ নাগালে পাওয়ার জন্য
ছোটাছুটি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এনি ছাড়াও ব্রিটেনের বিপি (ব্রিটিশ
পেট্রোলিয়াম), ফ্রান্সের টোটাল ও অস্ট্রিয়ার ওএমভি লিবিয়ায় সংঘাত শেষ হলে
সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে, তেমনই সম্ভাবনা রয়েছে। হেস, কনোকো-ফিলিপস,
ম্যারাথনসহ বিভিন্ন মার্কিনি কোম্পানিও গাদ্দাফি সরকারের সঙ্গে চুক্তি
করেছিল। ক্ষমতা নেওয়ার আগেই বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা বন্ধু ও শত্রু সবার
কথাই মনে রাখবে এবং সে অনুসারে আলোচনা করবে। বিদ্রোহীদের তেল কোম্পানি
এগোকোর (এরাবিয়ান গালফ অয়েল কোম্পানি) মুখপাত্র বলেছেন, ইতালীয়, ফরাসি,
ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কোম্পানিসমূহকে নিয়ে আমাদের কোনো
সমস্যা নেই। তবে রাশিয়া, চীন ও ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের কিছু রাজনৈতিক
বোঝাপড়া রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এ খবরেই বলা হয়, আন্তর্জাতিক তেল
কোম্পানিগুলোর জন্য গাদ্দাফি ছিলেন ঝামেলা বাধানোর শরিক। তিনি প্রায়ই ফি ও
কর বাড়িয়ে দিতেন, জানাতেন নানা দাবি। সে তুলনায় ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নতুন
সরকার হবে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য সহজে লেনদেন করার মতো শরিক। কোনো কোনো
বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অবাধ সুযোগ দিলে এসব তেল কোম্পানি লিবিয়ায় আরো
উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেলের খোঁজ পেতে পারে। গাদ্দাফি সরকার নানা বিধিনিষেধ
জারি করত। ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি যখন লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের নেতা জলিলকে
পরামর্শ করার জন্য প্যারিসে আমন্ত্রণ জানান, তখনই ফ্রান্সের কাছে লিবিয়ার
গুরুত্ব বুঝতে পারা যায়।
কানাডার গ্লোব অ্যান্ড মেল পত্রিকার এ
বিষয়ে একটি খবরের শিরোনাম ছিল- ‘লিবিয়ায় তেল উৎপাদকরা কঠিন রাজনৈতিক
সমস্যার মুখোমুখি।’ এ খবরে বলা হয় : বিদ্রোহী বাহিনী যদি গাদ্দাফি সরকারকে
কাবু করতে না পারে, তা হলে কানাডার কোম্পানিগুলোর জন্য তা বিপর্যয়কর ফলাফল
ডেকে আনবে। এটা বিশেষ করে এ কারণে যে, কানাডা গাদ্দাফিবিরোধী কথাবার্তা
বাড়িয়েছে এবং গাদ্দাফির বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের অঙ্গীকার করেছে।
এসব খবর/বক্তব্য থেকে লিবিয়ায় ন্যাটোর
যুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে তেলের কথা বাদ তো দেওয়া যায়ই না, বরং
সেটাই স্পষ্টভাবে চোখে ধরা পড়ে। তবে তেলকে লিবিয়াযুদ্ধের একমাত্র কারণ
হিসেবে গণ্য করা যুক্তিযুক্ত হবে না। কারণ তেল অন্য দেশেও আছে। সে সব দেশে
ন্যাটো এখনো পর্যন্ত আক্রমণ চালায়নি।
আজ তেলের জন্য ন্যাটো লিবিয়ায় যুদ্ধ
চালালেও এবং বিভিন্ন তেল কোম্পানি এ যুদ্ধে মদদ দিলেও এসব তেল কোম্পানি
গাদ্দাফির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা করেছে গাদ্দাফিবিরোধীদের
আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত। এমনকি লিবিয়ায় ন্যাটোর যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে
কোনো কোনো কোম্পানি দ্বিধায় ছিল যে, কোন পক্ষকে সমর্থন যোগাবে। আবার কোনো
কোনো তেল কোম্পানি গাদ্দাফি সরকারের সঙ্গে সে সময়ও সহযোগিতা করছিল। যেমন
মার্চের প্রায় মধ্য ভাগে রয়টার্সের এক খবরে বলা হয় : গাদ্দাফির তেল
কোম্পানি ন্যাশনাল অয়েল করপোরেশনের (এনওসি) সঙ্গে বিপির চুক্তিগুলো এখনো
বহাল আছে বলে বিপি ঘোষণা করেছে। এর একদিন আগে ইতালির তেল কোম্পানি এনি
জানায়, এনওসির সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চলছে। এমনকি গাদ্দাফির
নেতৃত্বাধীন লিবিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্যও এনি
ইউরোপীয় ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে দেনদরবার করে।
অর্থাৎ তেল কোম্পানি বা তেল
ব্যবসায়ীদের কাছে তেলই প্রধান বিষয়, গাদ্দাফি বা গাদ্দাফিবিরোধী বা এদের
নানা স্লোগান প্রধান বিষয় নয়। এ কারণেই এসব তেল কোম্পানি, এদের পক্ষে নানা
রাষ্ট্রের সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা, অন্যান্য কোম্পানি গাদ্দাফি সরকারের
সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। বন্ধুত্বের সে কাহিনী আগামীতে। তবে তার আগে দেখে
নেওয়া যাক লিবিয়ার যে তেল নিয়ে এত কান্ড, সে তেলের অবস্থা। আফ্রিকা
মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়ার রয়েছে তেলের সবচেয়ে বেশি প্রমাণিত মজুদ।
সেখানে তেল খননের কাজ সফলভাবে প্রথমবারের মতো সম্পন্ন হয় ১৯৫৯ সালে। প্রায়
১৫০ কিলোমিটার তেল পাইপ বসানোর পরে লিবিয়া তেল রফতানি শুরু করে ১৯৬১ সালে।
তেল উৎপাদন ১৯৬৯ সালের মধ্যে দিনে ৩০ লাখ ব্যারেলের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা
দেখা দেয়। পৃথিবীর সবচেয়ে গরিব দেশগুলোর অন্যতম লিবিয়া রাতারাতি হয়ে ওঠে
পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ।
কর্নেল গাদ্দাফির নেতৃত্বে একদল সেনা
কর্মকর্তা ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা
গ্রহণ করেন। তারা ক্ষমতাচ্যুত করেন রাজা ইদ্রিসকে। সে সময় গাদ্দাফির বয়স
৩০-এর কম। গাদ্দাফি সমাজতন্ত্র, আরব ভাবধারা, ইসলাম ধর্ম মিলিয়ে একটি
নিজস্ব রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ভাবনা স্বদেশে প্রয়োগের চেষ্টা করেন। ফলে দেখা
দেয় এক জগাখিচুড়ি অবস্থা। তিনি ১৯৬৯ সালে সব ব্যাংক জাতীয়করণ করেন; ১৯৭০
সালে জাতীয়করণ করেন তেলশিল্প। সব বিদেশী সৈন্য ঘাঁটি সরিয়ে নিতে বাধ্য করেন
সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে। এর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিও। তিনি আরব
ঐক্যের পক্ষে দাঁড়ান, মিসর, সুদান ও তিউনিসিয়ার সঙ্গে লিবিয়াকে একীভূত করার
পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এসব পরিকল্পনার কোনোটিই বাস্তবের মুখ দেখেনি। আরব
দেশগুলো ১৯৭৩ সালে যে তেল যুদ্ধ চালায় সে প্রয়াসে গাদ্দাফির নেতৃত্বে
লিবিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। লিবিয়া ক্রমান্বয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে
স্নায়ুযুদ্ধকালীন, অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের। কয়েকটি সংগ্রামী বা
বিপ্লবী সংগঠনকে গাদ্দাফি মদদ দেন। তবে তার মদদদান পদ্ধতি ও সংগঠন বাছাই
সুচিন্তিত ছিল না। ফলে দেখা গেছে, তিনি অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয়-প্রশ্রয়
দিয়েছেন চরম দক্ষিণপন্থী, পশ্চাৎমুখী ধারণাসজ্জিত শক্তিকে। কখনো তার কাজ
প্রকৃতপক্ষে সাহায্য করেছে তারই কথিত প্রতিপক্ষ শিবিরের গোয়েন্দা
সংস্থাগুলোকে।
এদিকে তেলের উৎপাদন কমতে থাকে তেল
রফতানিকারক দেশগুলোর সংস্থার (ওপেক) অন্যতম সদস্য দেশ লিবিয়ার। লিবিয়ার
তেলশিল্প গাদ্দাফি আমলে ছিল প্রধানত সে দেশের ন্যাশনাল অয়েল করপোরেশনের
(এনওসি) ও এর কয়েকটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির আওতাধীন। এগুলো ছিল রাষ্ট্রীয়
মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। লিবিয়ার রফতানি আয়ের ৯৫ শতাংশ যোগাতো তেল। সরকারি
রাজস্বের ৭৫ শতাংশ আসতো তেল থেকে।
লিবিয়ার প্রাপ্ত তেলের বৈশিষ্ট্য
হচ্ছে এতে সালফারের অনুপাত কম। এ কারণে এ তেলকে বলা হয় ‘সুইট’ বা ‘মিষ্টি’
তেল। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে লিবীয় তেলকে ভালো মানের তেল হিসেবে গণ্য করা হয়।
কারণ এ তেল শোধন করে ভালো মানের গ্যাসোলিন ও অন্যান্য জাতের তেল পাওয়া যায়,
যা পরিবেশকর্মীদের পছন্দ, যানবাহনের জন্যও ভালো। লিবিয়ার তেল আরেকটি দিক
থেকে সুবিধাজনক। এখান থেকে তেল নেওয়ার জন্য সুয়েজ খাল পেরোতে হয় না বা
উন্তমাশা অন্তরীপ ঘুরতেও হয় না। ভূমধ্যসাগরের এক তীর থেকে তেল নিয়ে অন্য
তীরে, ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালিতে ও ফ্রান্সের দক্ষিণ উপকূলে তেল শোধনাগারে
পৌঁছে দিলেই হয়। ফলে ‘কাজটি’ তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক; তাই লাভজনক।
লিবিয়ায় বিপুল পরিমাণ তেল ছাড়াও রয়েছে
বিপুল পরিমাণ গ্যাস। এ গ্যাসের অধিকাংশই এখনো আহরণের কাজই শুরু হয়নি।
প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ ২০০৭ সালের হিসাব অনুসারে ছিল প্রায় ৫৩
টিসিএফ। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের ২০০৮ সালের ইন্ধন জরিপ অনুসারে বলা যায়,
২০০৭ সালের শেষ নাগাদ লিবিয়ায় ছিল ৪১,৪৬৪ বিলিয়ন (শত কোটিতে এক বিলিয়ন)
ব্যারেল তেল। এ পরিমাণ সে সময় বিশ্বের তেল মজুদের ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
তেল ও গ্যাস ছাড়াও লিবিয়ায় রয়েছে
লোহা, জিপসাম, চুনাপাথর, সিমেন্ট পাথর, লবণ, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাথর,
ম্যাঙ্গানিজ, ফসফেট পাথর, সোডিয়াম কার্বনেট, সালফার ইত্যাদি। ওয়াদি আশ
শাতিতে লোহা আকর মজুদকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লোহা আকর মজুদ হিসেবে গণ্য
করা হয়। তবে এ লোহা আকরের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া এটি আহরণ ও
পরিবহনের অর্থনৈতিক দিকটিও সমস্যাপূর্ণ। এ কারণে এটি আহরিত হচ্ছিল না। এ
লোহা আহরণ ও ব্যবহারের জন্য একটি রেলপথ নির্মাণ ও ইস্পাত কারখানা স্থাপন
প্রক্রিয়াধীন ছিল।
এবার নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়ে ওঠে এ কথাটি :
লিবিয়ায় ন্যাটো আক্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে লিবীয় তেলের ওপরে
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। আর এ তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার দেশটিতে এমন সরকার থাকা, যে সরকার হবে এ কাজের সহায়ক
– বাধ্য, অনুগত। গাদ্দাফিবিরোধীরা ইতোমধ্যেই সে প্রমাণ দিয়েছেন। লিবিয়ায়
ন্যাটো এ আক্রমণের আরো কয়েকটি কারণ রয়েছে, যা এখানে উল্লেখ করা হলো না;
কারণ সেগুলো এ লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় নয়।
No comments:
Post a Comment