(তেল-গ্যাস লুণ্ঠন দেশে দেশে-২১)
উগান্ডার প্রাকৃতিক দৃশ্য আর ইতিহাস যেন দু’বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে। আফ্রিকার পূর্ব-মধ্যাঞ্চলে এ দেশটির প্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষকে মুগ্ধ করে। উত্তরে বিশাল হ্রদ লেক ভিক্টোরিয়া ছাড়াও দেশটির অসংখ্য হ্রদ আর নদী সবুজ বনবনানিতে যোগ করে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া রূপ। স্নেহভরে তাই অনেকেই উগান্ডাকে ভাবেন মুক্তা নামে। হাতি, সিংহ, গন্ডার আর কুমির ছাড়াও বুনো প্রাণীদের ঘোরাঘুরি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় সে সময়ের কথা, যখন আফ্রিকার মধ্য অঞ্চলে মানুষের পা পড়েনি, লাগেনি হাতের ছোঁয়া।
কিন্তু পূর্ব আফ্রিকায়, তাঞ্জানিয়ার উত্তরে আর কেনিয়ার পশ্চিমে ৯১ হাজার ১শ’ বর্গমাইলের সামান্য কিছু বেশি আয়তনের এ দেশটির জনজীবন, অর্থনীতি আর রাজনীতি চোখ ভোলানো প্রাকৃতিক দৃশ্যের মতো মনমুগ্ধকর নয়। দেশটির উত্তরে সুদান। দক্ষিণ-পশ্চিমে রোয়ান্ডা, পশ্চিমে কঙ্গো। উগান্ডার অধিকাংশ এলাকা উঁচু মালভূমি। দেশটির মোট ভূ-ভাগের প্রায় ১৮ শতাংশজুড়ে আছে জলাভূমি আর খোলা জলাধার। এসব খোলা জলাধারের মধ্যে লেক, ভিক্টোরিয়া ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লেক জর্জ, লেক আলবার্ট, লেক এডোয়ার্ড। দেশটির দক্ষিণে রয়েছে ঘন বন। প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে- কফি, তুলা, চা, ভুট্টা, বাদাম, কলা, আখ। খনিজসম্পদের মধ্যে দেশটিতে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত ছিল তামা। কিলেমবে খনি থেকে তামা তোলা শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। তার পর থেকে তামা হয়ে ওঠে উগান্ডার সবচেয়ে মূল্যবান রফতানি খনিজ সামগ্রী। এছাড়া রয়েছে টিন, কোবাল্ট, ওলফ্রাম, বেরিল ও ক্যাসিটেরাইটও আছে কিছু পরিমাণে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত আজকের উগান্ডা অঞ্চলে একের পর এক এসেছে নানা জনগোষ্ঠী। এমন চলেছে শত শত বছর ধরে। ফলে গড়ে উঠেছিল শক্তিধর কয়েকটি রাজ্য। এমনই এক রাজ্য ছিল রুয়ান্ডা। এ স্বাধীন রাজ্যকে ব্রিটেন ১৮৯৪ সালে বানিয়ে ফেলে আশ্রিত রাজ্য। কালের ধারায় ব্রিটেনের দখল বিস্তৃত হয় উগান্ডার পূর্বাংশ পর্যন্ত। উগান্ডা স্বাধীনতা পেল ১৯৬২ সালে। ফেডারেল রাষ্ট্র হিসেবে উগান্ডার মধ্যে থাকা রুয়ান্ডার স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা হলো। স্বাধীন উগান্ডার ড. মিল্টন ওবোটে হলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার কয়েক বছর পরে ওবোটে ঘোষণা করলেন ‘কমন সেন্স চার্টার’ বা ‘সাধারণ মানুষের সনদ’। এ সনদে দেশের সম্পদ সুষমভাবে বণ্টনের জন্য বর্ধিত প্রচেষ্টা গ্রহণের আহবান জানানো হলো। অনেকে মনে করলেন, ওবোটে বাম দিকে ঝুঁকছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন কলকারখানা জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হলো। ব্যক্তি মালিকদের কোম্পানিগুলো জাতীয়করণের কর্মসূচি আইনসভায় অনুমোদিত হলো। শুরু হলো উগান্ডার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার পদচারণা। কতই না রহস্যময় অর্থনীতি আর রাজনীতির সম্পর্ক!
মিল্টন ওবোটেকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা নিলেন জেনারেল ইদি আমিন, ১৯৭১ সালে ইদি আমিনের শাসনকাল ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আর রক্তাক্ত দমন-পীড়নে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে রয়েছে। ইদি আমিনের পতন ঘটল ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে। ক্ষমতায় বসল নানা উপদলে দীর্ণ ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট বা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট। এ মোর্চার নেতৃত্বে ছিলেন তারা, ইদি আমিনের শাসনকালে যারা ছিলেন প্রবাসে নির্বাসনে। নির্বাচন হলো ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে। সে নির্বাচনে জয়লাভ করল ওবোটের উগান্ডা পিপলস কংগ্রেস। তবে সেনাবাহিনী হয়ে থাকল উগান্ডার রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ শক্তি। সেই সঙ্গে উগান্ডার নানা বিষয়ে শেষ কথা ছিল প্রতিবেশী তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট জুলিয়ান নারায়েরের। কারণ ইদি আমিনকে ক্ষমতার আসন থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযানে সামনের সারিতে ছিল তাঞ্জানিয়ার সৈন্যরা। কিছু কাল ১০ হাজার তাঞ্জানীয় সৈন্য উগান্ডাতে অবস্থানও করে।
গৃহযুদ্ধ আর অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে অন্য দিকে উগান্ডার ফিরে চলা শুরু হয় আশির দশকের শেষ ভাগে। কারণ হানাহানি-রক্তপাতের অস্থিতির পরিবেশে পুঁজি বিনিয়োগ অসম্ভব, বিনিয়োজিত পুঁজি দিয়ে মুনাফা করা অনিশ্চিত, পুঁজি থাকে নিরাপত্তাহীন। তাই দরকার হানাহানি বন্ধ করা, দরকার পুঁজির কাছে গ্রহণযোগ্য শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ। কারণ অস্থিতির হানাহানির পরিবেশে শ্রমকে এক সঙ্গে বেঁধে বাড়তি মেহনত আত্মসাৎ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যে শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠিত হয়, তা পুঁজিকে করে সমৃদ্ধ; অর্থাৎ পুঁজি আরো ফুলেফেঁপে ওঠে। কানের সঙ্গে যেমন মাথা বা মাথার সঙ্গে যেমন কান থাকে, সেভাবেই পুঁজি ফুলেফেঁপে ওঠার ‘শান্তিপূর্ণ-স্থিতিশীল’ পরিবেশে থাকে দুর্নীতি, জুয়াচুরি, জালিয়াতি, ধাপ্পাবাজি। আর দারিদ্র্য-অনাহারের সব সময়ের পরিচিত চেহারা তো থাকেই।
ঘটনার ধারার দিকে দৃষ্টি দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ইদি আমিন ১৯৭২-৭৩ সালে তাঞ্জানিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়ায়; এর বছর পাঁচেক পরে, ১৯৭৮ সালে তাঞ্জানিয়ায় আক্রমণ চালায় উগান্ডা, লক্ষ্য ছিল তাঞ্জানিয়ার কাগেরা অঞ্চলকে উগান্ডার একীভূত করে নেওয়া; পরের বছর ১৯৭৯ সালে তাঞ্জানিয়া আক্রমণ চালায় উগান্ডায়। এ সময় ইদি আমিনবিরোধী সব পক্ষকে তাঞ্জানিয়া ঐক্যবদ্ধ করে; সে বছরই ইদি আমিন পালিয়ে যায় দেশ থেকে; প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেয়ারে বসানো হয় ইউসুফু লুলেকে; কিন্তু অল্পকালের মধ্যে লুলেকে তাড়িয়ে ক্ষমতায় বসানো হয় গডফ্রে বিনাইসাকে; আবার অল্পকালের মধ্যে ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনী হটিয়ে দেয় বিনাইসাকে; নির্বাচনে মিল্টন ওবোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন; প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় ওবোটেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে; প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হয় টিটে ওকেলোকে; পরের বছর ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল রেজিট্যান্স আর্মি বা জাতীয় প্রতিরোধ বাহিনী নামে এক দল বিদ্রোহী রাজধানী কাম্পালা দখল করে ইয়োয়েরি মুসেভেনিকে প্রেসিডেন্ট পদে বসায়।
এই একটি কিন্তু দীর্ঘ বাক্যে প্রায় ১৫ বছরের যে ঘটনা প্রবাহের খুব সংক্ষেপ বিবরণ রয়েছে, তাতে দেশটির যে অবস্থা ফুটে উঠেছে, সে অবস্থায় কোন বিনিয়োগকারী পুঁজি ঢালবেন মাটির সম্পদ আর মানুষের মেহনত আত্মসাৎ করার জন্য? গরু পোষাও তো নিরাপদ নয় এমন অস্থিতিতে, ফসল আবাদের জন্যও তো কিয়ৎকালের স্থিতি দরকার। তখনই মনসদে বসলেন বা বসানো হলো মুসেভেনিকে। পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ তেমন খাত ধরেই রইল।
তবে তার আগে দেখা যাক মুসেভেনির শাসনকে। এক বিদ্রোহী বাহিনীর প্রধান হিসেবে ক্ষমতা করায়ত্ত করলেন তিনি। তার পরে ২৫ বছরের বেশি কাল ধরে চলছে তার শাসন। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জয় লাভ করেছেন। এর আগে ২০০৬ সালের নির্বাচনেও জিতেছিলেন। এ নির্বাচনের আগে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদে থাকার মেয়াদগত সীমা সরিয়ে ফেলেছেন। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট জুয়াচুরি হয়েছে বলে মুসেভেনির প্রতিদ্বন্দ্বী অভিযোগ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, মুসেভেনি উগান্ডায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীলতা এনেছেন। দেশটিতে ২০০৫ সালে বহুদলীয় ব্যবস্থা আবার চালু করার আগে পর্যন্ত মুসেভিনে রাষ্ট্রটিকে চালিয়েছিলেন এক দলীয় ব্যবস্থায়। তিনি এ যাবৎ মোট চার বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন; ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬ ও ২০১১ সালে। অর্থাৎ চলছে এক ব্যক্তির একটি শাসন ব্যবস্থা, রয়েছে স্থিতি, পুঁজিবাদী বিশ্ব এই এক ব্যক্তির শাসন নিয়ে কথা বলে না।
হত্যা, অপহরণ, লর্ডস রেজিস্ট্যানস আর্মি নামে সশস্ত্র দলের গেরিলা কার্যক্রম অব্যাহতও রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে কিছু ‘মজার’ ঘটনা। প্রথমে উল্লেখ করা যায় ১৯৯৫ সালে বলবত সংবিধানের কথা। সে সংবিধান রাজনৈতিক দল গঠনকে বৈধ করে; কিন্তু রাজনৈতিক তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। যে কোনো পাঠকই এ ঘটনার সঙ্গে তুলনা করতে পারেন তেলসমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলার। সে দেশটিতে শ্যাভেজ সরকার এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমেরিকা-ইউরোপের সরকারগুলো ও মূল ধারার তথ্য মাধ্যম কি বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা-নিন্দার বন্যা বইয়ে দিত না? অথচ উগান্ডার এ খবর ক’বার, কয়টি তথ্যমাধ্যম প্রচার করেছে? এর পর উল্লেখ করা যায় ১৯৯৭ সালের আরেকটি ঘটনা। সে বছর উগান্ডার সৈন্যরা জায়েরে (পরবর্তীকালে দেশটির নাম হয় কঙ্গো) ঢুকে মুবুতু সরকারকে উৎখাত করতে সাহায্য করে। ক্ষমতায় বসানো হয় লরেন্ট কাবিলাকে। পরের বছর উগান্ডা আবার ঢোকে জায়েরে। এবারের প্রবেশ ঘটে কাবিলাকে উৎখাতে সচেষ্ট বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়ে। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত আক্রমণের ও আক্রমণ-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ। এ দুয়ের মধ্যে এ দুই ঘটনা নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার সরকারগুলো ও মূল ধারার তথ্যমাধ্যমের প্রচারের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চয়ই পাঠকদের মনোযোগ বা দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। সাদ্দামের ক্ষেত্রে সোচ্চার, সক্রিয়, নিন্দামুখর অবস্থান অপরটি যেন চোখের বা জানার আড়ালে রয়ে গেল। এমন ‘মজাদার’ তৃতীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করতে হয় ২০০০ সালের একটি ঘটনা। সে বছর উগান্ডার ভোটাররা বহু দলব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে মুসেভেনি প্রবর্তিত ‘নির্দল’ ব্যবস্থার পক্ষে ভোট দেন। যদি এ ঘটনা ভেনেজুয়েলায় ঘটত? ইউরোপ-আমেরিকার সরকারগুলো ও মূল ধারার তথ্যমাধ্যম সে ঘটনাকে কিভাবে, কতটুকু রং মাখিয়ে, কত জোরালো গলায়, কত রসালো ভঙ্গিতে, কত নিন্দার সুরে প্রচার করত, তা অনুমান করা যায় ভেনেজুয়েলা সম্পর্কে মূল ধারার বর্তমান প্রচার দেখেশুনে। এর পরের ‘মজাদার’ ঘটনা ২০০৫ সালে। আন্তর্জাতিক আদালতে কঙ্গো অভিযোগ করে, উগান্ডা ১৯৯৯ সালে কঙ্গোতে অনুপ্রবেশ, কঙ্গোর নাগরিকদের হত্যা ও কঙ্গোয় লুটপাট করে। উগান্ডা সে অভিযোগ অস্বীকার করে। আদালতে উগান্ডার কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। অথচ একই ধরনের কাজকর্মের দায়ে এ আদালতেই বিচারের উদাহরণ রয়েছে। এসব ঘটনা পাঠককে হয় তো মনে করিয়ে দেবে বিশ্বে বর্তমানে চালু ব্যবস্থার কথা। আর পাঠকের হয় তো মনে পড়বে আমাদের জাতীয় কবির রচিত গানের একটি লাইন : খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে।
কে খেলছে। আগে, একটি দীর্ঘ বাক্যে উগান্ডার প্রায় ১৫ বছরের এত ঘটনা আর পরবর্তীতে কয়েকটি বাক্যে প্রায় ২৫ বছরের শাসনের বিবরণ কি কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরে না? প্রশ্ন কি এটা যে, এত ঘটনা কেন? এত ঘটনার আড়ালে কারা? কেন এত রক্তপাত, হানাহানি, ক্ষমতায় বসানো, ক্ষমতা থেকে সরানো? উগান্ডার সমাজ, রাষ্ট্র এত অস্থির, এত সহিংশ হয়ে ওঠে কেন। আবার স্থিতিশীলতাই ফিরে আসে কিভাবে? এসব কোন সঙ্গীতের সুর? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হবে আগামীতে। আজ বোধ হয় একটি ঘটনাকে প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে শেষ করা যেতে পারে।
উগান্ডার একটি বার্তা মাধ্যম খবর দেয় : উগান্ডার বিশিষ্ট গায়িকা শেইলা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, স্টেট হাউসে এক অনুষ্ঠানে তাকে দেখেই প্রেসিডেন্ট মুসেভেলি চিনে ফেলেন এবং গান গাইতে অনুরোধ করেন ও এক পর্যায়ে গায়িকাকে প্রেসিডেন্ট কোলে তুলে নেন। সাক্ষাৎকারটির শিরোনাম ‘আই স্যাট অন মুসেভেনিজ ল্যাপ’, ‘মুসেভেনির কোলে বসেছিলাম।’ দেশটির ঘটনাও কি এমন? নিভৃতে কারো কোলে বসে কেউ গাইছে মধুর সুরে গান? দেশবাসীও কি জানেন : কার কোলে কে বসে আছে?
উগান্ডার প্রাকৃতিক দৃশ্য আর ইতিহাস যেন দু’বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে। আফ্রিকার পূর্ব-মধ্যাঞ্চলে এ দেশটির প্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষকে মুগ্ধ করে। উত্তরে বিশাল হ্রদ লেক ভিক্টোরিয়া ছাড়াও দেশটির অসংখ্য হ্রদ আর নদী সবুজ বনবনানিতে যোগ করে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া রূপ। স্নেহভরে তাই অনেকেই উগান্ডাকে ভাবেন মুক্তা নামে। হাতি, সিংহ, গন্ডার আর কুমির ছাড়াও বুনো প্রাণীদের ঘোরাঘুরি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় সে সময়ের কথা, যখন আফ্রিকার মধ্য অঞ্চলে মানুষের পা পড়েনি, লাগেনি হাতের ছোঁয়া।
কিন্তু পূর্ব আফ্রিকায়, তাঞ্জানিয়ার উত্তরে আর কেনিয়ার পশ্চিমে ৯১ হাজার ১শ’ বর্গমাইলের সামান্য কিছু বেশি আয়তনের এ দেশটির জনজীবন, অর্থনীতি আর রাজনীতি চোখ ভোলানো প্রাকৃতিক দৃশ্যের মতো মনমুগ্ধকর নয়। দেশটির উত্তরে সুদান। দক্ষিণ-পশ্চিমে রোয়ান্ডা, পশ্চিমে কঙ্গো। উগান্ডার অধিকাংশ এলাকা উঁচু মালভূমি। দেশটির মোট ভূ-ভাগের প্রায় ১৮ শতাংশজুড়ে আছে জলাভূমি আর খোলা জলাধার। এসব খোলা জলাধারের মধ্যে লেক, ভিক্টোরিয়া ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লেক জর্জ, লেক আলবার্ট, লেক এডোয়ার্ড। দেশটির দক্ষিণে রয়েছে ঘন বন। প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে- কফি, তুলা, চা, ভুট্টা, বাদাম, কলা, আখ। খনিজসম্পদের মধ্যে দেশটিতে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত ছিল তামা। কিলেমবে খনি থেকে তামা তোলা শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। তার পর থেকে তামা হয়ে ওঠে উগান্ডার সবচেয়ে মূল্যবান রফতানি খনিজ সামগ্রী। এছাড়া রয়েছে টিন, কোবাল্ট, ওলফ্রাম, বেরিল ও ক্যাসিটেরাইটও আছে কিছু পরিমাণে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত আজকের উগান্ডা অঞ্চলে একের পর এক এসেছে নানা জনগোষ্ঠী। এমন চলেছে শত শত বছর ধরে। ফলে গড়ে উঠেছিল শক্তিধর কয়েকটি রাজ্য। এমনই এক রাজ্য ছিল রুয়ান্ডা। এ স্বাধীন রাজ্যকে ব্রিটেন ১৮৯৪ সালে বানিয়ে ফেলে আশ্রিত রাজ্য। কালের ধারায় ব্রিটেনের দখল বিস্তৃত হয় উগান্ডার পূর্বাংশ পর্যন্ত। উগান্ডা স্বাধীনতা পেল ১৯৬২ সালে। ফেডারেল রাষ্ট্র হিসেবে উগান্ডার মধ্যে থাকা রুয়ান্ডার স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা হলো। স্বাধীন উগান্ডার ড. মিল্টন ওবোটে হলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার কয়েক বছর পরে ওবোটে ঘোষণা করলেন ‘কমন সেন্স চার্টার’ বা ‘সাধারণ মানুষের সনদ’। এ সনদে দেশের সম্পদ সুষমভাবে বণ্টনের জন্য বর্ধিত প্রচেষ্টা গ্রহণের আহবান জানানো হলো। অনেকে মনে করলেন, ওবোটে বাম দিকে ঝুঁকছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন কলকারখানা জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হলো। ব্যক্তি মালিকদের কোম্পানিগুলো জাতীয়করণের কর্মসূচি আইনসভায় অনুমোদিত হলো। শুরু হলো উগান্ডার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার পদচারণা। কতই না রহস্যময় অর্থনীতি আর রাজনীতির সম্পর্ক!
মিল্টন ওবোটেকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা নিলেন জেনারেল ইদি আমিন, ১৯৭১ সালে ইদি আমিনের শাসনকাল ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আর রক্তাক্ত দমন-পীড়নে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে রয়েছে। ইদি আমিনের পতন ঘটল ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে। ক্ষমতায় বসল নানা উপদলে দীর্ণ ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট বা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট। এ মোর্চার নেতৃত্বে ছিলেন তারা, ইদি আমিনের শাসনকালে যারা ছিলেন প্রবাসে নির্বাসনে। নির্বাচন হলো ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে। সে নির্বাচনে জয়লাভ করল ওবোটের উগান্ডা পিপলস কংগ্রেস। তবে সেনাবাহিনী হয়ে থাকল উগান্ডার রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ শক্তি। সেই সঙ্গে উগান্ডার নানা বিষয়ে শেষ কথা ছিল প্রতিবেশী তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট জুলিয়ান নারায়েরের। কারণ ইদি আমিনকে ক্ষমতার আসন থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযানে সামনের সারিতে ছিল তাঞ্জানিয়ার সৈন্যরা। কিছু কাল ১০ হাজার তাঞ্জানীয় সৈন্য উগান্ডাতে অবস্থানও করে।
গৃহযুদ্ধ আর অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে অন্য দিকে উগান্ডার ফিরে চলা শুরু হয় আশির দশকের শেষ ভাগে। কারণ হানাহানি-রক্তপাতের অস্থিতির পরিবেশে পুঁজি বিনিয়োগ অসম্ভব, বিনিয়োজিত পুঁজি দিয়ে মুনাফা করা অনিশ্চিত, পুঁজি থাকে নিরাপত্তাহীন। তাই দরকার হানাহানি বন্ধ করা, দরকার পুঁজির কাছে গ্রহণযোগ্য শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ। কারণ অস্থিতির হানাহানির পরিবেশে শ্রমকে এক সঙ্গে বেঁধে বাড়তি মেহনত আত্মসাৎ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যে শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠিত হয়, তা পুঁজিকে করে সমৃদ্ধ; অর্থাৎ পুঁজি আরো ফুলেফেঁপে ওঠে। কানের সঙ্গে যেমন মাথা বা মাথার সঙ্গে যেমন কান থাকে, সেভাবেই পুঁজি ফুলেফেঁপে ওঠার ‘শান্তিপূর্ণ-স্থিতিশীল’ পরিবেশে থাকে দুর্নীতি, জুয়াচুরি, জালিয়াতি, ধাপ্পাবাজি। আর দারিদ্র্য-অনাহারের সব সময়ের পরিচিত চেহারা তো থাকেই।
ঘটনার ধারার দিকে দৃষ্টি দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ইদি আমিন ১৯৭২-৭৩ সালে তাঞ্জানিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়ায়; এর বছর পাঁচেক পরে, ১৯৭৮ সালে তাঞ্জানিয়ায় আক্রমণ চালায় উগান্ডা, লক্ষ্য ছিল তাঞ্জানিয়ার কাগেরা অঞ্চলকে উগান্ডার একীভূত করে নেওয়া; পরের বছর ১৯৭৯ সালে তাঞ্জানিয়া আক্রমণ চালায় উগান্ডায়। এ সময় ইদি আমিনবিরোধী সব পক্ষকে তাঞ্জানিয়া ঐক্যবদ্ধ করে; সে বছরই ইদি আমিন পালিয়ে যায় দেশ থেকে; প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেয়ারে বসানো হয় ইউসুফু লুলেকে; কিন্তু অল্পকালের মধ্যে লুলেকে তাড়িয়ে ক্ষমতায় বসানো হয় গডফ্রে বিনাইসাকে; আবার অল্পকালের মধ্যে ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনী হটিয়ে দেয় বিনাইসাকে; নির্বাচনে মিল্টন ওবোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন; প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় ওবোটেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে; প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হয় টিটে ওকেলোকে; পরের বছর ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল রেজিট্যান্স আর্মি বা জাতীয় প্রতিরোধ বাহিনী নামে এক দল বিদ্রোহী রাজধানী কাম্পালা দখল করে ইয়োয়েরি মুসেভেনিকে প্রেসিডেন্ট পদে বসায়।
এই একটি কিন্তু দীর্ঘ বাক্যে প্রায় ১৫ বছরের যে ঘটনা প্রবাহের খুব সংক্ষেপ বিবরণ রয়েছে, তাতে দেশটির যে অবস্থা ফুটে উঠেছে, সে অবস্থায় কোন বিনিয়োগকারী পুঁজি ঢালবেন মাটির সম্পদ আর মানুষের মেহনত আত্মসাৎ করার জন্য? গরু পোষাও তো নিরাপদ নয় এমন অস্থিতিতে, ফসল আবাদের জন্যও তো কিয়ৎকালের স্থিতি দরকার। তখনই মনসদে বসলেন বা বসানো হলো মুসেভেনিকে। পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ তেমন খাত ধরেই রইল।
তবে তার আগে দেখা যাক মুসেভেনির শাসনকে। এক বিদ্রোহী বাহিনীর প্রধান হিসেবে ক্ষমতা করায়ত্ত করলেন তিনি। তার পরে ২৫ বছরের বেশি কাল ধরে চলছে তার শাসন। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জয় লাভ করেছেন। এর আগে ২০০৬ সালের নির্বাচনেও জিতেছিলেন। এ নির্বাচনের আগে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদে থাকার মেয়াদগত সীমা সরিয়ে ফেলেছেন। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট জুয়াচুরি হয়েছে বলে মুসেভেনির প্রতিদ্বন্দ্বী অভিযোগ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, মুসেভেনি উগান্ডায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীলতা এনেছেন। দেশটিতে ২০০৫ সালে বহুদলীয় ব্যবস্থা আবার চালু করার আগে পর্যন্ত মুসেভিনে রাষ্ট্রটিকে চালিয়েছিলেন এক দলীয় ব্যবস্থায়। তিনি এ যাবৎ মোট চার বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন; ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬ ও ২০১১ সালে। অর্থাৎ চলছে এক ব্যক্তির একটি শাসন ব্যবস্থা, রয়েছে স্থিতি, পুঁজিবাদী বিশ্ব এই এক ব্যক্তির শাসন নিয়ে কথা বলে না।
হত্যা, অপহরণ, লর্ডস রেজিস্ট্যানস আর্মি নামে সশস্ত্র দলের গেরিলা কার্যক্রম অব্যাহতও রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে কিছু ‘মজার’ ঘটনা। প্রথমে উল্লেখ করা যায় ১৯৯৫ সালে বলবত সংবিধানের কথা। সে সংবিধান রাজনৈতিক দল গঠনকে বৈধ করে; কিন্তু রাজনৈতিক তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। যে কোনো পাঠকই এ ঘটনার সঙ্গে তুলনা করতে পারেন তেলসমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলার। সে দেশটিতে শ্যাভেজ সরকার এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমেরিকা-ইউরোপের সরকারগুলো ও মূল ধারার তথ্য মাধ্যম কি বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা-নিন্দার বন্যা বইয়ে দিত না? অথচ উগান্ডার এ খবর ক’বার, কয়টি তথ্যমাধ্যম প্রচার করেছে? এর পর উল্লেখ করা যায় ১৯৯৭ সালের আরেকটি ঘটনা। সে বছর উগান্ডার সৈন্যরা জায়েরে (পরবর্তীকালে দেশটির নাম হয় কঙ্গো) ঢুকে মুবুতু সরকারকে উৎখাত করতে সাহায্য করে। ক্ষমতায় বসানো হয় লরেন্ট কাবিলাকে। পরের বছর উগান্ডা আবার ঢোকে জায়েরে। এবারের প্রবেশ ঘটে কাবিলাকে উৎখাতে সচেষ্ট বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়ে। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত আক্রমণের ও আক্রমণ-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ। এ দুয়ের মধ্যে এ দুই ঘটনা নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার সরকারগুলো ও মূল ধারার তথ্যমাধ্যমের প্রচারের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চয়ই পাঠকদের মনোযোগ বা দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। সাদ্দামের ক্ষেত্রে সোচ্চার, সক্রিয়, নিন্দামুখর অবস্থান অপরটি যেন চোখের বা জানার আড়ালে রয়ে গেল। এমন ‘মজাদার’ তৃতীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করতে হয় ২০০০ সালের একটি ঘটনা। সে বছর উগান্ডার ভোটাররা বহু দলব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে মুসেভেনি প্রবর্তিত ‘নির্দল’ ব্যবস্থার পক্ষে ভোট দেন। যদি এ ঘটনা ভেনেজুয়েলায় ঘটত? ইউরোপ-আমেরিকার সরকারগুলো ও মূল ধারার তথ্যমাধ্যম সে ঘটনাকে কিভাবে, কতটুকু রং মাখিয়ে, কত জোরালো গলায়, কত রসালো ভঙ্গিতে, কত নিন্দার সুরে প্রচার করত, তা অনুমান করা যায় ভেনেজুয়েলা সম্পর্কে মূল ধারার বর্তমান প্রচার দেখেশুনে। এর পরের ‘মজাদার’ ঘটনা ২০০৫ সালে। আন্তর্জাতিক আদালতে কঙ্গো অভিযোগ করে, উগান্ডা ১৯৯৯ সালে কঙ্গোতে অনুপ্রবেশ, কঙ্গোর নাগরিকদের হত্যা ও কঙ্গোয় লুটপাট করে। উগান্ডা সে অভিযোগ অস্বীকার করে। আদালতে উগান্ডার কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। অথচ একই ধরনের কাজকর্মের দায়ে এ আদালতেই বিচারের উদাহরণ রয়েছে। এসব ঘটনা পাঠককে হয় তো মনে করিয়ে দেবে বিশ্বে বর্তমানে চালু ব্যবস্থার কথা। আর পাঠকের হয় তো মনে পড়বে আমাদের জাতীয় কবির রচিত গানের একটি লাইন : খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে।
কে খেলছে। আগে, একটি দীর্ঘ বাক্যে উগান্ডার প্রায় ১৫ বছরের এত ঘটনা আর পরবর্তীতে কয়েকটি বাক্যে প্রায় ২৫ বছরের শাসনের বিবরণ কি কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরে না? প্রশ্ন কি এটা যে, এত ঘটনা কেন? এত ঘটনার আড়ালে কারা? কেন এত রক্তপাত, হানাহানি, ক্ষমতায় বসানো, ক্ষমতা থেকে সরানো? উগান্ডার সমাজ, রাষ্ট্র এত অস্থির, এত সহিংশ হয়ে ওঠে কেন। আবার স্থিতিশীলতাই ফিরে আসে কিভাবে? এসব কোন সঙ্গীতের সুর? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হবে আগামীতে। আজ বোধ হয় একটি ঘটনাকে প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে শেষ করা যেতে পারে।
উগান্ডার একটি বার্তা মাধ্যম খবর দেয় : উগান্ডার বিশিষ্ট গায়িকা শেইলা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, স্টেট হাউসে এক অনুষ্ঠানে তাকে দেখেই প্রেসিডেন্ট মুসেভেলি চিনে ফেলেন এবং গান গাইতে অনুরোধ করেন ও এক পর্যায়ে গায়িকাকে প্রেসিডেন্ট কোলে তুলে নেন। সাক্ষাৎকারটির শিরোনাম ‘আই স্যাট অন মুসেভেনিজ ল্যাপ’, ‘মুসেভেনির কোলে বসেছিলাম।’ দেশটির ঘটনাও কি এমন? নিভৃতে কারো কোলে বসে কেউ গাইছে মধুর সুরে গান? দেশবাসীও কি জানেন : কার কোলে কে বসে আছে?