Friday, October 21, 2011

যুদ্ধে জড়িত কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি

মবুতুর পরে ক্ষমতায় বসানো হলো লরেন্ট কাবিলাকে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ অনুগত মিত্র। কাবিলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, ১৯৯৭ সালে একজন প্রতিনিধি পাঠালেন কানাডার টরেন্টোতে। উদ্দেশ্য : বিনিয়োগ সুযোগ নিয়ে খনি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। কাবিলার বাহিনী গোমা দখলের পর পরই, ১৯৯৭ সালে, আমেরিকান মিন্যারাল ফিল্ডস (এএমএফ) নামের কোম্পানি কাবিলার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের চুক্তি করে। এ এলাকায় দস্তা, তামা ও কোবাল্ট খনিগুলো থেকে খনিজ সম্পদ আহরণের একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয় এএমএফকে। এ কোম্পানির প্রধান ছিলেন মাইক ম্যাকমরো। মাইক আবার যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বন্ধু। আর এ চুক্তি সম্পাদনে কাবিলার পক্ষে আলোচনা করেছিলেন কঙ্গোর যে লোকটি, তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এসব তথ্য পরিবেশিত হয়েছে আগেই উল্লেখ করা ‘এ গেম এজ ওল্ড এজ অ্যাম্পায়ার’ বইতে।

ঘটনা, সম্পদ লুটের ঘটনাগুলো খেয়াল করে দেখলে এভাবে বন্ধুত্ব, যোগসাজশ, ইত্যাদি চোখে পড়ে। হানাহানি, হামলা, যুদ্ধ চলতে থাকল। এ সবে সামনাসামনি জড়িয়ে থাকল উগান্ডা, রুয়ান্ডা প্রভৃতি দেশ; আড়ালে রইল বহুজাতিক করপোরেশন (বক), আর বকদের আশ্রয় দেওয়া রাষ্ট্র শক্তিগুলো। উগান্ডা ও রুয়ান্ডা চেয়েছে স্ব স্ব দেশের সীমান্ত বরাবর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে। কাবিলা গোটা দেশ নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছেন। উপরে উল্লেখিত বইতে বলা হয়েছে, কাবিলার সেনাবাহিনী ও বিরোধী কোঙ্গোলিজ র‌্যালি ফর ডেমোক্র্যাসি নামের বাহিনীকে, দু’পক্ষকেই মদদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সংঘাত বেড়েছে, দেশটির অস্থিতিশীলতা বেড়েছে; ফলে বিদেশী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করার জন্যই সবাই মিলে চেষ্টা চালিয়েছে দেশটিকে স্থিতিহীন রাখার।

রুয়ান্ডা ও উগান্ডার সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; রুয়ান্ডার সৈন্যদের ও বিদ্রোহী সশস্ত্র দলগুলোকে যুদ্ধের নানা কলাকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডো সেনারা। রুয়ান্ডা কঙ্গোতে সেনাবাহিনী পাঠানোর আগে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট সফর করেছিলেন পেন্টাগন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর। এমনকি, এ সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল যে, সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে রুয়ান্ডা কঙ্গোয় অভিযান শুরু করার আগেই, ১৯৯৮ সালের ২৩ ও ২৪ জুলাই কঙ্গোতে ঢুকে পড়া রুয়ান্ডার সৈন্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের দেখা গেছে। আগে উল্লিখিত ‘এ গেম এজ ওল্ড এজ অ্যাম্পায়ার’ বইতে এসব তথ্য রয়েছে।

এদিকে, কঙ্গো-রুয়ান্ডা সীমান্তে রুয়ান্ডার সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে দেয় সামরিক বিষয়ে ঠিকাদার কেলগ, ব্রাউন অ্যান্ড রুট নামে কোম্পানি। এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল কোম্পানি হ্যালিবার্টনের সাবসিডিয়ারি। এ ঘাঁটিতে রুয়ান্ডার সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। আবার, উপগ্রহের মাধ্যমে সংগ্রহ করা মানচিত্র ও ছবি কাবিলাকে যোগান দেয় বেকটেল করপোরেশন। এগুলো কাবিলাকে দেওয়া হতো যাতে মবুতুর সৈন্যদের চলাচলের হালনাগাদ খবর ও অবস্থান কাবিলা জানতে পারেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল কোম্পানি বেকটেলয়ের পরিচালকমন্ডলীতে বা প্রধান পদে যারা আছেন/ছিলেন, তাদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছেন। এদের মধ্যে জর্জ শুলজ, কাসপার ওয়েইনবার্গার প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়। আবার, ডিক চেনি এক সময়ে ছিলেন হ্যালিবার্টনের প্রধান। কেলগ, ব্রাউন অ্যান্ড রুটয়ের মালিক আবার হেলিবার্টন, কেইথ হারমন স্নো ‘দ্য ওয়ার দ্যাট ডিড নট মেক দ্য হেডলাইনস : ওভার ফাইভ মিলিয়ন ডেড ইন কঙ্গো’ প্রবন্ধে লিখেছেন : মানবাধিকার বিষয়ে দলনিরপেক্ষ একজন তদন্তকারী দেখেছেন যে, মিলিটারি প্রফেশনাল রিসোর্সেস ইনকরপোরেটেড এবং কেলগ, ব্রাউন অ্যান্ড রুট নামে ব্যক্তি মালিকানাধীন সামরিক কোম্পানি দুটির সঙ্গে পেন্টাগনের সম্পর্ক রয়েছে।

এবার লুটের ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি। তার ভাই সলিম সালেহ। তিনি তিনটি বিমান ইজারা দিলেন উগান্ডার সামরিক বাহিনীকে। এ বিমানগুলো কঙ্গোতে সৈন্য ও সামগ্রী সরবরাহের কাজে লাগানো হলো। উগান্ডার সেনা কর্তাবৃন্দ, কঙ্গোর বিদ্রোহী গ্রুপগুলো ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগসাজশে সালেহ নিশ্চিত করলেন যে, ফেরত পথে বিমানগুলো যেন বোঝাই থাকে সোনা, কাঠ, কফি দিয়ে।

আরেকটি তথ্য উল্লেখ করা যাক। রুয়ান্ডায় হীরা খনি নেই। অথচ রুয়ান্ডা ১৯৯৮ সালে ১৬৬ ক্যারেট হীরা রফতানি করে। আর তা ২০০০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৫০০ ক্যারেটে।

আরেকটি তথ্য উল্লেখ করা যাক। পাশ্চাত্যের বিশাল খনি কোম্পানি বারিক গোল্ড করপোরেশন। এটি কানাডীয় কোম্পানি। কঙ্গোর খনি সম্পদে এ কোম্পানির রয়েছে বিপুল বিনিয়োগ। এ কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর পরিচয়? কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্রায়ান মুলরোনে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের উপদেষ্টা ভার্নন জর্ডান। এ কোম্পানির উপদেষ্টাদের একজন হচ্ছেন জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশ, যাকে সংক্ষেপে জর্জ ডব্লু বুশ বা জর্জ বুশ নামে পৃথিবীর মানুষ চেনেন।

কঙ্গো থেকে সুবিধা পেয়েছে যেসব কোম্পানি, সেগুলোর অন্যতম কানাডার হেরিটেজ অয়েল অ্যান্ড গ্যাস। উগান্ডা আর রুয়ান্ডার সামরিক বাহিনী ১৯৯৮ সালে যখন কঙ্গোর মাটিতে পা রাখল, সে সময়েই সেখানে পৌঁছায় হেরিটেজ অয়েল অ্যান্ড গ্যাস। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংক পাঁচ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলার কর্জ দেয় কঙ্গোয় রুয়ান্ডা সমর্থিত বিদ্রোহী দলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। আর, রুয়ান্ডা ও উগান্ডা যখন কঙ্গোয় লুট চালাচ্ছে, সে সময়েই এ দু’দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ছে বলে এ দু’দেশ প্রশংসা পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের।

উপরে উল্লিখিত তথ্যগুলো পরিবেশিত হয়েছে ইতোমধ্যে উল্লেখ করা এ গেম এজ অ্যান্ড… বইতে। সত্য যে কোথায় কোনটি, তা বুঝতে পারা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের তথ্য বিপুল। একের পর এক এসব তথ্য সাজালে সহজেই কয়েকটি বই লেখা যায়। এসব তথ্য যথাযথভাবে সংযুক্ত করলে, এগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক খুঁজে পেলে সত্য আর আড়ালে থাকে না। লুট, হামলা, পেছনে থাকা শক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতির ভালো ভালো কথা, লেনদেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যকার সম্পর্ক, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক, ইত্যাদি সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। তখন আর বিভ্রান্তি থাকে না এ পৃথিবীর বড় শক্তিদের চেহারা-চরিত্র-বক্তব্য নিয়ে। তবে, এক বিপুল আশ্চর্য তবুও অপেক্ষা করে। সে বিপুল আশ্চর্য হচ্ছে : আজো দেশে দেশে এ শক্তিবর্গের মিত্ররা পরম শ্রদ্ধায় পূজা পান। তারাও ভেবে দেখেন না যে, দেশের সাধারণ মানুষ যেদিন জানতে পারবেন এ পূজনীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এ শক্তিবর্গের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা, সেদিন সাধারণ মানুষই ধিক্কার দেবেন এ ব্যক্তিকে বা ব্যক্তিবর্গকে। আর, সাধারণ মানুষ প্রতিদিন তা করেন না, মাঝে মধ্যে করেন। যেমন, আমাদের এ ভূখন্ডেই, আমাদের আজকের বাংলাদেশে, ১৯৪৭ সালের আগে-পরে কতই না শ্রদ্ধা পেতেন মুসলিম লীগ নেতা জিন্নাহ। তাকে তো এ দেশেরই মানুষ ধিক্কার দিয়েছেন, প্রত্যাখ্যান করেছেন, তার কথার প্রতিবাদ করেছেন। কোনো কথাই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাখতে পারেনি। একইভাবে, দেশে দেশে লুটের সঙ্গে জড়িত যে রাষ্ট্র শক্তি, তার পরম মিত্র, তার আস্থাভাজন লোককে সাধারণ মানুষ কি গ্রহণ করবেন? ধিক্কারে-নিন্দায় উচ্চারিত হবে সে নাম। কারণ, সাধারণ মানুষ কখনোই দেশের সম্মান ও মর্যাদা বলি দেন না। কঙ্গোতেও তাই হয়েছে। বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র শোম্বের নাম আজ আর কেউ উচ্চারণ করেন না শ্রদ্ধায়, সে নাম উচ্চারিত হয় ঘৃণায়, ধিক্কারে। মানুষের হৃদয়ে আসন গেড়ে আছেন প্যাট্রিস লুমুমবা।

কঙ্গোর দুর্ভোগের শেষ হয় না। কারণ তার সম্পদ কেবল সোনা, হীরা, কোবাল্টে সীমিত নেই। সেখানে আছে তেল। সে তেলের পরিমাণ একেবারে কম নয়। তাই এ তেল নিয়ে প্রতিযোগিতা রয়েছে এবং প্রতিযোগিতা প্রবল। ব্রিটেনের পত্রিকা ফাইন্যানশিয়াল টাইমসের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায় : কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে ৫ নম্বর ব্লক নিয়ে শুরু হয়েছে বিরোধ। এ ব্লকে রয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। সেখানে রয়েছে বন, গরিলা, হাতি। এখানে রয়েছে মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো জাতীয় উদ্যান। এ ব্লকটি দেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের দুটি তেল কোম্পানিকে। দেশটির আইন অনুসারে জাতীয় উদ্যানে কেবল বৈজ্ঞানিক কাজ চালানো যায়, তেল অনুসন্ধান ও উৎপাদন করা যায় না। দেশটির ৪১ জন এমপি জাতীয় উদ্যানের সীমানা নতুন করে চিহ্নিত করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন পরিবেশমন্ত্রীর কাছে। প্রতিবেশী উগান্ডায় যুক্তরাজ্যের আরেকটি কোম্পানি, তাল্ল অয়েল সন্ধান পেয়েছে আড়াইশ কোটি ব্যারেল তেলের। এর পর থেকেই তেল তোলার জন্য প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। এ ব্লকে তেল তোলার জন্য পার্টনারশিপ শেয়ারিং এগ্রিমেন্ট বা উৎপাদন ভাগাভাগি চুক্তি করা হয়। এটা খুব গোপন করে রাখা হয়। এ চুক্তি অনুসারে সিগনেচার বোনাস হিসেবে উৎপাদন দেবে ২০ লাখ ডলার, প্রথম উৎপাদন বোনাস হিসেবে দেবে ২০ লাখ ডলার; আর, একটি বার্ষিক কর দেওয়ার পাশাপাশি এক কোটি ব্যারেল তেল কিনবে ৫০ লাখ ডলারে। মুনাফার ওপরে ভাগাভাগি আছে। এ চুক্তি সংশোধন করা হয়। সে সংশোধন অনুসারে কিছু অর্থ আবার সিগনেচার বোনাস হিসেবে দেওয়া হয়। কত পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়, তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে অনুমান করা হয়, এ পরিমাণ পাঁচ লাখ ডলার। এ অর্থ দেওয়া হয় চুক্তিটি প্রেসিডেন্ট অনুমোদন করার কয়েক সপ্তাহ আগে।

এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, তেল কোম্পানিগুলো যে অর্থ দেয়, তার চেয়ে বেশি নিয়ে যায়। তা না হলে এসব কোম্পানি তেল তুলতে আসত না। কারণ কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দর্শন ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ নয়।

এ লুটের ‘কাহিনী’ বিশাল। তার ধরন অনেক। ব্যক্তি পর্যায়ে, কোম্পানি পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে, অনানুষ্ঠানিকভাবে, আইনের ও প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায়, আইন ভেঙে লুট চলে। এ লুট এত ব্যাপক পর্যায়ে পৌঁছায় যে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ২০০০ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে বেআইনিভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ করতে বলে। জাতিসংঘ মহাসচিব এ বিষয়ে যে প্রতিবেদন পেশ করেন তাতে এ লুটের একটি দিক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়।

এ প্রতিবেদন ছয়টি উপসংহারে উপনীত হয়। প্রথম উপসংহারেই বলা হয় : গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে সংঘাত প্রধানত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের প্রাপ্তি, নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্য নিয়ে। এ পাঁচটি খনিজ সম্পদ হলো কোলটান, হীরা, তামা, কোবাল্ট ও সোনা। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ এত যে হতবিহবল হয়ে যেতে হয়। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ও আইনহীনতার প্রেক্ষাপটে এ সম্পদ মুঠো না করার প্রলোভন ঠেকানো কঠিন। দ্বিতীয় উপসংহারে বলা হয় : বিদেশী সেনাবাহিনীগুলো সুব্যবস্থিতভাবে কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করছে। তা লুট করা হচ্ছে। এ নিয়ে গড়ে উঠেছে অপরাধী চক্র। এসব চক্রের যোগাযোগ রয়েছে বিশ্বব্যাপী। তৃতীয় উপসংহারের একটি অংশে বলা হয় : কয়েকটি কোম্পানি কঙ্গোতে যুদ্ধে জড়িত। এসব কোম্পানি যুদ্ধে সরাসরি ইন্ধন যুগিয়েছে। এসব কোম্পানি প্রাকৃতিক সম্পদের বিনিময়ে অস্ত্র যুগিয়েছে। অন্য কয়েকটি কোম্পানি দিয়েছে অর্থ। সে অর্থ খরচ হয়েছে অস্ত্র কেনায়। খনিজ সম্পদের ব্যবসা করে যে কোম্পানিগুলো, তারাই দেশটিতে বেআইনিভাবে খনিজ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। লুটের এ কাহিনী আগামীতে আরো তথ্য দেবে।

No comments:

Post a Comment