Thursday, November 3, 2011

কেবলই দুর্ভোগ কান্না-রক্ত (তেল-গ্যাস লুণ্ঠন দেশে দেশে-১৮)

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের খনিজ সম্পদের প্রসঙ্গ উঠলেই দেশটির হীরা, সোনা আর কোলটানের কথা ওঠে। দেশটির ইন্ধন সম্পদও কম নয়। এ সম্পদ এখন ক্রমান্বয়ে আগ্রহীদের চোখে পড়ছে। দেশটিতে রয়েছে তেল, গ্যাস ও কয়লার উল্লেখযোগ্য মজুদ। এছাড়া পানি বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনাও বিপুল। প্রায় এক লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে দেশটিতে। এ পরিমাণ হচ্ছে বিশ্বে উৎপাদিত জলবিদ্যুতের প্রায় ১৩ শতাংশ। এসবই দেশটির প্রতি আকৃষ্ট করছে মুনাফা সন্ধানকারীদের।

আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলের গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের অশোধিত তেলের মজুদ এঙ্গোলার পরেই; অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানীয়। দেশটির অশোধিত তেলের মজুদ ২০০৯ সালের হিসাব অনুসারে ছিল ১৮ কোটি ব্যারেল। তেল ও গ্যাস বিষয়ে দেশটি প্রথমবারের মতো সম্মেলন আয়োজন করে ২০০৮ সালের মধ্য আগস্টে। এ খবর জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার।

দেশটিতে তেল খোঁজার কাজ শুরু হয় গত শতকের ষাটের দশকে। সেখানে উপকূলের কাছে সাগরে তেল তোলা শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। ভূ-ভাগে তেল তোলা শুরু হয় ১৯৮০ সালে। এ তোলার কাজ ১৯৮৬ সালে চলছিল আটটি তেল ক্ষেত্র থেকে। এরপর থেকে তেল আহরণের কাজ বেড়ে চলে। এ ঘটনা ধারার সঙ্গে দেশটিতে হানাহানি-সংঘাত-যুদ্ধের এবং এসব হ্রাস-বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। দেশটির জ্বালানি জরিপ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয় : কঙ্গোতে তেলের প্রমাণিত মজুদ বিপুল। গ্যাসও তেমন আছে। তেলের ওপর ভিত্তি করেই দেশটির সবল অর্থনীতি গড়ে উঠতে পারে। স্থলভাগে তেল-গ্যাস যা আছে, তাতে হাতের ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে। উপকূলের কাছে তেল ক্ষেত্রগুলো থেকে তেল তুলছে ফ্রান্সের পেরেনকো, জাপানের টেইকোকু, যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন টেক্সাকো। স্থলভাগে, উপকূল অঞ্চলের কাছাকাছি জায়গা তেল তুলছে পেরেনকো এবং কঙ্গোর তেল কোম্পানির কোহাইড্রো। আরো ছয়টি ব্লক নির্দিষ্ট করে সেগুলোতে সন্ধান কাজ চালানোর জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার এনারগাল্ফ, যুক্তরাজ্যের সোকো এবং শিওরাস্ট্রিম নামের কোম্পানিকে। মধ্য সমতল অঞ্চলে উগান্ডা সীমান্তের লাগোয়া লেক কিভুতেও তেল রয়েছে। কিন্তু হ্রদের লাগোয়া এলাকায় উগান্ডা এরই মধ্যে ভালো মানের তেল তুলছে। ফলে এখানে বেড়েছে উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতা। কঙ্গোতে তেলসংশ্লিষ্ট নানাপর্যায়ের কাজে জড়িত রয়েছে শেল, ফিনা, টোটাল, এনজেন, কোবিল, কঙ্গো অয়েল ও কোহাইড্রো।

এ দেশটিতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি নথিতে বলা হয় : নির্বাচনের মধ্য দিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরে এলে ২৬ ট্রিলিয়ন বা ২৬ লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানগুলো সবল করা ইত্যাদি উদ্যোগ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছে। এজন্য দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সুবিধা। এ সুবিধার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ছাড়, মুনাফার ওপর করসহ বিভিন্ন কর রেয়াত, বিদেশী বিনিয়োগ ও সম্পদ নিশ্চিত করা ইত্যাদি। এ দলিলেই বলা হয় : কঙ্গোতে রয়েছে নগর অঞ্চলে অবস্থানরত বিপুল শ্রম। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ উচ্চ বিদ্যালয় উত্তীর্ণ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক। তবে দক্ষ শ্রমের ঘাটতি রয়েছে। এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুঁজি আনা-নেওয়া প্রসঙ্গে এ নথিতে বলা হয় : কঙ্গো থেকে পুঁজি রফতানিতে এবং অন্যত্র সরাসরি বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনো নীতি নেই। অর্থাৎ  পুঁজির চলাচল অবাধ অনিয়ন্ত্রিত। এরই মধ্যে কঙ্গোতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখা দিয়েছে শেভরন অয়েল (কোম্পানিটির সাবসিডিয়ারি কঙ্গো গাল্ফ অয়েলকে সঙ্গে নিয়ে), সিটি ব্যাংক, টেলেসেল, মবিল। এসব তেল, ব্যাংক আর টেলিফোন কোম্পানির সঙ্গে একইসারিতে রয়েছে বিয়ার তৈরির কোম্পানি ব্র্যালিমা ও ইউনিব্রা, সিগারেট তৈরির কোম্পানি টোবাকঙ্গো/রথম্যান ও বিএটিকঙ্গো, পাইকারি ব্যবসায়ী হাসন গ্রুপ, পাম তেল শোধনের কোম্পানি পিএলসি।

একটি দেশের সম্পদ প্রকৃত অর্থে লুট করার জন্য আয়োজন মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে বলেই দেখা যাচ্ছে। সম্পদ আছে, সে সম্পদ নির্বিঘ্নে লুট করার জন্য রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, এ সংক্রান্ত সব কাজ সুরক্ষার জন্য আছে আইনের আশ্রয়, আছে শ্রম, আছে মুনাফা সরিয়ে নেওয়ার পথে কোনো বাধা না রাখার আশ্বাস। এসবের মাথায় আছে অনুগত রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

কোম্পানিরা আসছে, বিনিয়োগ করছে, বিনিয়োগের জায়গা বাছাই চলছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুরু হচ্ছে প্রতিযোগিতা। কেবল খেয়াল রাখা হচ্ছে, এই হুড়োহুড়িতে সবেমাত্র দাঁড় করানো কাঠামো যেন হুড়মুড় করে ভেঙে না পড়ে। এক দফায় লুট চলল বিনিয়োগ নিরাপদ করার আইন না মেনে, আক্ষরিকভাবেই লুট। কিন্তু তাতে কিছু বিনিয়োগকারীর অসুবিধা হয়। তাছাড়া ও পথে লুট পুরোমাত্রায় করা যায় না। তাই আয়োজন হয় গৃহযুদ্ধের আগুন নেভানোর। সে কাজে জাতিসংঘের সাহায্যও পাওয়া যায়। জাতিসংঘ শান্তি কায়েমের যে কাজটি করে দেয়, তার খরচ পড়ে কম। এ হিসাবও করেছে বার্তা সংস্থাগুলো। সব ঠিকঠাক চললে, স্থিতাবস্থা বজায় থাকলে মুনাফা আহরণের হার খারাপ হয় না; গায়েও লেপ্টে থাকে না লুটেরার লেবাস।

কিন্তু পুঁজির প্রতিযোগিতা চলে। স্থিতাবস্থার কাঠামোর মধ্যেই চেষ্টা চলে প্রতিযোগিতার মীমাংসা করার। গোপন থাকে না বহু বিষয়। ফলে খবর বেরোয় : ব্রিটিশ তেল কোম্পানি টাল্লো ও ব্রিটিশ দূতাবাস বিতর্কিত চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা করছে। এ চুক্তি সম্পাদিত হলে কঙ্গো হারাতে পারে ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার। বিতর্কিত এ চুক্তিটি ফাঁস করে দেয় তেল বিষয়ে নজর রাখে এমন একটি সংগঠন। এ সংগঠনের নাম প্ল্যাটফর্ম।

এ কাজে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ছিল আফ্রিকান ইন্সটিটিউট ফর এনার্জি গভর্নেন্স। চুক্তিটি হচ্ছে প্রডাকশন শেয়ারিং এগ্রিমেন্ট বা উৎপাদন ভাগাভাগি চুক্তি। প্ল্যাটফর্ম এ চুক্তিটি ফাঁস করে দেওয়ার পাশাপাশি একটি বিশ্লেষণও প্রকাশ করে। এ বিশ্লেষণে বলা হয় : অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করা হয় চুক্তি মারফত। এর খেসারত দেবেন কঙ্গোর গরিব মানুষ। টাল্লোর চুক্তি বহাল হলে যে হাজার কোটি ডলার রাজস্ব সরকার হারাবে, সেটা দেশটির পুরো জাতীয় ঋণের সমান। এ চুক্তিটি সম্পাদনের জন্য টাল্লো এবং কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসায় ব্রিটিশ দূতাবাস জোর লবিং বা দেনদরবার করছে। চুক্তিটি সম্পাদিত হলে আফ্রিকার সব চেয়ে গরিবদের একাংশের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ হস্তান্তরিত হবে ব্রিটিশ ও আইরিশ বিনিয়োগকারীদের কাছে। এ বিশ্লেষণ ছাড়াও প্ল্যাটফর্ম পরিকল্পিত চুক্তিটির কয়েকটি দিক তুলে ধরে, যা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণীয় নয়। যেমন তেল কোম্পানিগুলো ও সশস্ত্র উপদলগুলোর মধ্যে দোস্তি কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে আবার শুরু করবে সম্পদ দখলের লড়াই; প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে ফেলার আইনসম্মত অধিকার প্রদান; পরিবেশের কোনো ক্ষতি হলে দন্ড প্রদানের ব্যবস্থা একটুও নেই এবং চুক্তির এমন একটি ধারা, যা কঙ্গোর পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধিকে বাধা দেবে। এগুলো রয়েছে চুক্তির ২১, ২৪, ২৬, ২৭ ও ৩৩ পৃষ্ঠায়।

এমন আরো উদাহরণ পাওয়া যাবে। প্রতিযোগিতায় অনেক সময় স্বচ্ছতা থাকে না। যেমন দেশটির পূর্বাঞ্চলে ১ ও ২ নম্বর ব্লক দেওয়া হলো দুটি কোম্পানিকে। এ দুটি কোম্পানি মিলে গঠন করতে চলেছে স্থানীয় একটি কোম্পানি। এতে দু’কোম্পানির মালিকানা থাকবে ৮৫ শতাংশ আর কঙ্গো রাষ্ট্রের মালিকানা থাকবে ১৫ শতাংশ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এতে কঙ্গোর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি কোহাইড্রোর কোনো অংশ নেই। সেই সঙ্গে বিদেশী কোম্পানি দুটিতে বিনিয়োগকারীদের পরিচয় জানানো হচ্ছে না। আবার এ দুটি কোম্পানি শুরু করেছিল একটি ট্রাস্ট। কোম্পানি দুটির একটি হচ্ছে লগ্নি বিনিয়োগকারী, অপরটি হচ্ছে শিল্প বিনিয়োগকারী। জেনেভার যে আইনজীবী এ কোম্পানি দুটির প্রতিনিধি এবং ট্রাস্টটি পরিচালনা করেন, তিনি পাওয়ার অব এটর্নি সংক্রান্ত কাগজপত্র হস্তান্তর করেছেন যাদের কাছে, তাদের আবার কোম্পানি দুটিতে কোনো অংশীদারিত্ব নেই। রয়টারের এক খবর বলা হয়, এ দুটি ব্লকের জন্য চুক্তি করেছে টাল্লো। সঙ্গে আছে হেরিটেজ ও কোহাইড্রো।পুরো ব্যাপারটি হয়ে উঠেছে বড্ড ঘোরপ্যঁাচের।

পুঁজির জগতই এমন। আইনের ছায়ার নিচে আশ্রয় নিয়ে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে নানা দেওয়া-নেওয়া হয়, যা আইনের হাতে ধরা পড়বে না। আর এমন ঘোরালা-প্যঁাচালো দেওয়া-নেওয়া সহজ হয় অস্বচ্ছতার আবরণে। এ অস্বচ্ছতার আবরণ বিষয়গুলোকে জনসাধারণের চোখের আড়ালে রাখতে সাহায্য করে। একদিকে রাখা হয় ঘোরপ্যাচ, আরেক দিকে অস্বচ্ছতা। ফলে ‘আইনসম্মতভাবে’ লুটের কাজটি হয় সহজ।

এ ব্লক দুটিতে অর্থাৎ ১ আর ২তে ইতালির বড় তেল কোম্পানি এনিরও আগ্রহ রয়েছে। ফলে হয়তো আবার হবে লেনদেন এনির সঙ্গে ওই দু’কোম্পানির, কঙ্গোর তেল প্রবাহিত হবে নল দিয়ে, তেল বিক্রির মুনাফা উঠবে কয়েকজনের ঘরে এবং কঙ্গোর মানুষ এত কান্ডের কিছুই জানবেন না।

কঙ্গোতে স্বার্থ অনেকেরই। তেলের খোঁজ যতই পাওয়া যাচ্ছে, ততই স্বার্থ গভীর হচ্ছে, বাড়ছে আগ্রহ। কেবল প্রধান প্রধান শক্তিধর দেশ নয়, অন্যান্য দেশেরও স্বার্থ রয়েছে। কঙ্গোতে ২৫টি আন্তর্জাতিক খনি কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে কানাডার খনি কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য রয়েছে। দেশটিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরক্কোর খনি কোম্পানি। এ তথ্য মার্কেটলাইন বিজিনেস ইনফরমেশন সেন্টারের, এংলোগেল্ডি অশান্তির এবং বিভিন্ন কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনের। এসব কোম্পানির বিনিয়োগ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ লাখ কোটি, লাখ কোটি ডলার। গৃহযুদ্ধের অস্থিরতায় এত বিনিয়োগ সম্ভব ছিল না। হানাহানি সংঘাতের ডামাডোলে সরাসরি লুট সম্ভব। শ্রমকে শৃঙ্খলে বেঁধে সম্পদ তুলে, অতিরিক্ত শ্রম আত্মসাৎ করে মুনাফা ঘরে তুলতে দরকার হয় স্থিতিশীলতা, কাঠামোর মধ্যে আটকে রাখা শান্তি। এ স্থিতিশীলতা, এ শান্তি পুঁজির, মুনাফার, বাড়তি মেহনত আত্মসাতের। মেহনতের প্রসঙ্গ আসছে এ কারণে যে, মেহনত যোগ না হলে মাটির গভীর থেকে কোনো সম্পদ তোলা হতো না। খনির গর্ভ থেকে সম্পদ আহরণে কল বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়; কিন্তু সে কলও তো চালায় মেহনত, মানুষের মেহনত।

এত অর্থ যেখানে বিনিয়োজিত হয়, সেখানে আরো অর্থের উৎস রয়েছে। আর এত কোম্পানির এত অর্থ সেখানে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রেষারেষি উৎস হিসেবেও কাজ করে। আইনের কাঠামোর মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিযোগিতার, ভাগাভাগির মীমাংসা না হলে সে মীমাংসা হয় আইনের কাঠামোর প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-রীতির বাইরে। তখনই রাজনীতিতে আসে হানাহানি পিছু পিছু আসে রক্তপাত। কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে খনির কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলা এ বছরের গোড়ার দিকে তা তুলে নেন। ফলে কাজ শুরু হবে খনি থেকে সম্পদ আহরণের; শুরু হবে প্রতিযোগিতা, লেনদেন; তৈরি হবে আগামীর হানাহানি, রক্তপাতের পটভূমি। হয়তো গজিয়ে উঠবে নতুন নতুন বিদ্রোহী গ্রুপ। সব কিছুর আড়ালে থাকবে পুঁজির হাত।

কঙ্গোর ৫ নম্বর ব্লকে উৎপাদন ভাগাভাগি চুক্তি (উভাচু) করেছে ডোমিনিয়ন পেট্রোলিয়াম, সঙ্গে আছে সোকো ইন্টারন্যাশনাল ও কোহাইড্রো। এ খবরও বার্তা সংস্থা রয়টারের। উগান্ডা সীমান্তে এ ব্লকে  তেল তোলা নিয়ে উগান্ডার সঙ্গে কঙ্গোর রয়েছে রেষারেষি। কঙ্গোর আটলান্টিক উপকূলে দুটি উভাচু করেছে শিওরস্ট্রিম নামের এক কোম্পানি। এ কোম্পানির প্রধান হচ্ছেন সেনেগালের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি এর আগে কঙ্গোয় শান্তি আলোচনায় সাহায্য করেছিলেন। কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট এক ডিক্রি বলে এ চুক্তির ব্যবস্থা করেন। লেনদেনটি চমৎকার নয় কি?

কঙ্গোয় আরো তেলের ও গ্যাসের খোঁজ চলছে। তেল কোম্পানিগুলো ধারণা করছে ভালো মানের অনেক তেল-গ্যাস পাওয়া যাবে; হয়তো তা হয়ে উঠবে আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি তেল-গ্যাস মজুদগুলোর অন্যতম। ফলে দেশটির আশপাশে দূরদেশী প্রভুর সৈন্যদের আনাগোনার খবরে কেউই অবাক হবেন না। কঙ্গোর মানুষও আশ্চর্যবোধ করবেন না। তেমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো কঙ্গোর জনগণের বিধিলিপি এ মুহূর্তে রচিত হচ্ছে কোনো দূর দেশের রাজধানীতে, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, তেল কোম্পানির সদর দফতরে, হয়তো কোনো সেনানায়ক ছক তৈরি করছেন সেনা মোতায়েনের। সম্পদ কি তা হলে দুর্ভোগ-রক্ত-কান্না ডেকে আনে?

No comments:

Post a Comment