Friday, July 15, 2011

নাইজেরিয়া আর উইকিলিকস(তেল-গ্যাস লুণ্ঠন দেশে দেশ-৩)

আফ্রিকায় তেলের প্রসঙ্গ উঠলেই প্রথমে যে দেশগুলোর নাম উচ্চারিত হয়, সেগুলোর অন্যতম নাইজেরিয়া। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক লর্ড লুগার্ডের সৃষ্টি আধুনিক কালের নাইজেরিয়ার ললাট লিখন যেন শুধুই রক্তপাত। নাইজার, বেনু আর ক্রস নদীর পানি ধোয়া তিন লাখ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বেশি এলাকায় বিস্তৃত পশ্চিম আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলের এ দেশটির ভূগর্ভে রয়েছে তেল, গ্যাস, কয়লা, লোহা, টিন, চুনাপাথর, কলামবাইট, সোনা, ট্যানট্যালাইট। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অসাধারণ সম্ভাবনার দেশ নাইজেরিয়ার সমস্যাগুলোও যেন তুলনাহীন। খ্রিস্ট পূর্বাব্দ ৭০০-তে গোড়াপত্তন যে ভূখন্ডের সংস্কৃতির, সেটিকে পর্তুগিজ আর ব্রিটিশরা পদানত করে পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে। প্রায় আড়াইশ’ উপজাতির/গোত্রের প্রায় আড়াইশ’ ভাষা/স্থানিক ভাষার এ দেশটি গৃহযুদ্ধের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা ‘অর্জন’ করে ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার প্রায় সাত বছরের মাথায়। বায়াফ্রা নাম নিয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়া অঞ্চলের সে যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। সে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, ১৯৬৬ সালের শুরুতেই ২৫ জন সেনাকর্তা অভ্যুত্থান করে এবং খুন করে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই মুখ্যমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেলসহ কয়েকজন সেনাকর্তাকে। দু’দিনের মধ্যে, ১৭ জানুয়ারি, সে বিদ্রোহ দমন করেন সেনাপ্রধান, গ্রহণ করেন সর্বময় ক্ষমতা। তিনি স্থগিত করেন সংবিধান, গঠন করেন সুপ্রিম সামরিক পরিষদ, বিলোপ করেন সব রাজনৈতিক দল ও উপজাতীয় সমিতি। এর প্রায় সাড়ে ছয় মাস পরে ঘটে আরেক সেনা অভ্যুত্থান। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেই জেনারেলকে খুন করা হয়। ক্ষমতায় বসানো হয় একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে। পরে তিনি হন জেনারেল, জেনারেল গওয়ান। জাতীয় সামরিক সরকারের নাম হয় ফেডারেল সামরিক সরকার। গিনি উপসাগর তীরের এ দেশটি ১৩ বছর সেনাশাসনের পরে ১৯৭৯ সালের অক্টোবরে ফিরে পায় বেসামরিক সরকার।
কিন্তু নাইজার উপত্যকায় ব্রিটিশ স্বার্থের ভিত গেঁড়েছিল যে ন্যাশনাল আফ্রিকান কোম্পানি উনবিংশ শতাব্দীতে, সনদ পেয়ে যে কোম্পানি হয়েছিল রয়্যাল নাইজার কোম্পানি, সে কোম্পানির হাত থেকে রাজপ্রভুর হাতে গিয়ে ১৯১৪ সালে হয়েছিল যে ‘নাইজেরিয়া উপনিবেশ ও আশ্রিত রাজ্য’, সেই উপনিবেশটি যেন শোষিত আর রক্তাক্ত হওয়ার ‘ভাগ্য’ এড়াতে পারে না বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতেও। গণতন্ত্রও সেখানে রয়ে যায় অবিকশিত। ব্রিটেনের পত্রিকা ইকনোমিস্টের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট গণতন্ত্রের অবস্থা পরিমাপের জন্য যে গণতন্ত্র সূচক ব্যবহার করে তার বিচারে ২০১০ সালে ১৬৭টি দেশের মধ্যে নাইজেরিয়ার অবস্থান হয় ১২৩তম।
আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার এ দেশটিকে তেল কোম্পানি শেল অয়েল যেন মরণ বাঁধনে আটকে রেখেছে। শাসন ব্যবস্থাতেও তার বিপুল প্রভাব। এ তেল কোম্পানির সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নাইজেরিয়া থেকে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের যে সব তারবার্তা উইকিলিকস ফাঁস করে দিয়েছে, সেগুলো থেকে এমন ধারণাই হয় বলে ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েব সাইটে প্যাট্রিক মার্টিন মন্তব্য করেছেন। ‘উইকিলিকস ডকুমেন্টস শো শেল অয়েল ডোমিনেশন ইন নাইজেরিয়া’ শিরোনামের নিবন্ধে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উইকিলিকস নাইজেরিয়া সংক্রান্ত প্রায় ছয়টি তারবার্তা ফাঁস করে। মার্টিন উল্লিখিত সে সব তার বার্তা থেকে দেখা যায়, শেল কোম্পানির আফ্রিকা বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এন পিকার্ড ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবিন স্যান্ডার্সের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে যান। তাদের আলোচনার বিষয় ছিল পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রি বিল নামে তেল শিল্পসংক্রান্ত একটি বিল। সে সময় এ বিলটি নিয়ে নাইজেরিয়ার আইন সভায় আলোচনা চলছিল। এ বিলটি আইন সভায় গৃহীত হলে সে দেশে আন্তর্জাতিক যৌথ উদ্যোগ আইনগত সম্মতি পাবে, দেশটির তেলশিল্প বিদেশী পুঁজির কাছে আরো খুলে যাবে। নাইজেরিয়ার তেলশিল্প নামমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছিল। এতে দেখা যায়, নাইজেরিয়ার আইনসভাকে ইচ্ছে মতো ম্যানিপুলেট বা নাড়াচাড়া করার জন্য কোম্পানির কৌশল নিয়ে পিকার্ড আলোচনা করেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, নাইজেরিয়ার সিনেট বা আইন সভার উচ্চকক্ষ খারাপ ধরনের বিল পাস করবে। তবে ‘এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। আইন সভার নিম্নকক্ষের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। নিম্নকক্ষও আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায় বলে মনে হয়।’
পিকার্ডের কাছে রাষ্ট্রদূত স্যান্ডার্স জানতে চান, তেল কোম্পানিগুলো ঐক্যবদ্ধ কিনা অর্থাৎ শেলের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর মতভেদ রয়েছে কিনা? উল্লেখ করা দরকার যে, শেল হচ্ছে ব্রিটিশ-ডাচ মালিকানাধীন কোম্পানি।
পিকার্ড জানান, আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সবপর্যায়ে সঙ্গতি রয়েছে। রাষ্ট্রদূত তখন পিকার্ডকে জানান, যৌথ উদ্যোগের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ, ডাচ ও ফরাসি দূতাবাসের কর্তারা একত্রে নাইজেরিয়ান পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছেন।
পিকার্ড এর পরে নাইজেরিয়ায় তেল ব্লকগুলো নিয়ে বিডিংয়ে চীনের আগ্রহের কথা রাষ্ট্রদূতকে জানান। তিনি বলেন, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের পেট্রোলিয়াম বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা চীনাদের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছে তার একটি কপি শেল পেয়েছে।
মার্টিনের ওই লেখায় তার বার্তার উল্লেখ করে বলা হয়, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে তেল নিয়ে নাইজেরিয়ার যে আলাপ-আলোচনা চলছে সেখানে শেলের ‘ভালো সোর্স’ বা তথ্য জানানোর ভালো লোক রয়েছে। কারণ, নাইজেরিয়া সরকার ‘ভুলে গেছে যে, প্রাসঙ্গিক সব মন্ত্রণালয়েই শেল লোক রেখেছে এবং এর ফলে এসব মন্ত্রণালয়ে যা করা হয়, তার সবই শেল জানতে পারে।’
উইকিলিকসের ফাঁস করে দেওয়া এ তারবার্তায় যা প্রকাশ হয়েছে, তা থেকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের সরকারের লেনদেন, আলাপ-আলোচনা; একটি বিদেশী কোম্পানির আগ্রহের, নাক গলানোর ও তৎপরতার ব্যাপ্তি; একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের আইনসভার কার্যক্রমে একটি বিদেশী কোম্পানির হস্তক্ষেপ, ইত্যাদি বুঝতে পারা যায়। এসব কোম্পানির হাত অনেক শক্তিশালী ও দীর্ঘ।
উইকিলিকসের ফাঁস করে দেওয়া তারবার্তা থেকে দেখা যায়, তেল কোম্পানি শেলের এ কর্তা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কেবল তেল সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েই যে আলোচনা করেছেন, তা নয়। তারা নাইজেরিয়ার রাজনীতি, অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশ পর্যায়ে পরবর্তী নির্বাচন, নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ও তাদের আলোচনায় স্থান পায়।
তারবার্তা থেকে জানা যায়, শেলের একটি স্থাপনায় সশস্ত্র হামলার পরে সে স্থাপনায় শেল নিয়োগ করে ইসরাইলি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল ডোনা ব্লেয়ারের পাঠানো তারবার্তা থেকে জানা যায়, আরেক সভায় পিকার্ড নাইজেরিয়ায় রুশ তেল-গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রময়ের কোনো আগ্রহ আছে কিনা এবং থাকলে সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু জানে, সেটা জানতে চান। নাইজার ডেল্টায় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সম্ভাব্যতা সম্পর্কেও তিনি জানতে চান। তেল কোম্পানির এ কর্তা ও দূতাবাসের কর্তা নাইজেরিয়ায় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর অনুসৃত নতুন ধরনের সামরিক কলাকৌশল নিয়েও বিস্তারিত আলাচনা করেন। এসব সশস্ত্র গ্রুপ তখন স্থলভাগ থেকে আক্রমণ চালাচ্ছিল। এর আগে এসব গ্রুপ আক্রমণ চালাতো জলভাগ থেকে, তাদের বিশদ আলোচনায় এসব সশস্ত্র গ্রুপের ব্যাপারে নাইজেরিয়া সরকারের রাজনৈতিক সাড়া বা পাল্টা ব্যবস্থাও স্থান পায়। শেল কর্তা পিকার্ড এ আলোচনাকালে অভিযোগ করেন, ‘ডেলটা স্টেট ও বায়েলসা স্টেটের [নাইজেরিয়ার দুটি অঙ্গরাজ্য] গভর্নরদ্বয় স্ব স্ব অঙ্গরাজ্যে যেভাবে সশস্ত্র সংগঠনের কর্মীদের নিজ পক্ষে ভিড়িয়ে নেওয়ার কাজে সফল হয়েছেন, সেভাবে রিভারস স্টেটে সফল হওয়ার জন্য সে অঙ্গরাজ্যের সশস্ত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই’ রিভারস স্টেটের গভর্নরের।
এসব তার বার্তা থেকে আরো জানা যায়, শেল কর্তা যুক্তরাষ্ট্রের কনসালকে বলছেন, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপ করার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো হয়েছে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে। এ মর্মে ‘গোয়েন্দা’ খবর আছে তেল কোম্পানির কাছে। তবে এ খবরের নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে কোম্পানি নিশ্চিত নয়। ‘আকাশপথে নিরাপত্তার জন্য শেল গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পিকার্ড জানান, শেলের হেলিকপ্টারগুলো মোটামুটি সবসময়ই সশস্ত্র সংগঠনের ব্যবহৃত ছোট ও মাঝারি মাপের অস্ত্রের পাল্লার ওপর দিয়ে চলাচল করে।’ এসব তথ্য কোনো প্রতিপক্ষের নয়। সংশ্লিষ্টদের কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনার বিবরণ এগুলো। আর এ বিবরণগুলো লিখেছেন সংশ্লিষ্টরাই। তাদের বয়ান তারা লিখে পাঠিয়েছেন তাদেরই ঊর্ধ্বতন মহলে, সদর অফিসে। উইকিলিকস এগুলো ফাঁস করেছে মাত্র। তাই এখানে বানোয়াট বিবরণের সুযোগ নেই, যদি বানোয়াট, অতিরঞ্জন, অল্পকথন কিছু থেকে থাকে, সে দায় বার্তা রচয়িতাদের। তবে সে সুযোগও নেই। কারণ, এসব কথাবার্তা সবই কাজকর্মে সংশ্লিষ্ট। আর এসব কাজকর্ম যে ব্যবসার ও যে কোম্পানির সঙ্গে জড়িত তার ব্যাপ্তি অনেক দেশের চেয়ে বড়, যার রাজস্ব অনেক দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চেয়ে বেশি। সামান্য হেরফেরে বহু টাকার লোকসান হয়ে যাবে।
ফাঁস হওয়া এসব বার্তা দেখিয়ে দেয় এমন বাণিজ্যে জড়িতদের হয় তো কত দীর্ঘ, কত সবল, একটি দেশের কত গভীরে, কত পর্যায়ে কত জনের সঙ্গে তাদের সখ্য। এগুলো আরো দেখিয়ে দেয় এ ধরনের কোম্পানিগুলো একটি দেশের কত দিকে সূক্ষ্মভাবে ও গভীর মনোযোগ দিয়ে নজর রাখে, কত দিককে নিজেদের ইচ্ছেমতো নাড়াচাড়া করে, সাজায়-গোছায়, দোমড়ায়-মোচড়ায়। একটি সমাজে বাইরের পক্ষ, ব্যবসায়, কোম্পানি এভাবে হস্তক্ষেপ করলে, প্রভাবিত করলে, দোমড়ালে, মোচড়ালে সে সমাজ কি আপন গতিতে আপন পছন্দসই দিকে চলতে পারে? এভাবে প্রভাবিত করলে, দোমড়ালে-মোচড়ালে সে সমাজ, সে রাষ্ট্র কি স্ব দেশের জনসাধারণের কল্যাণ বয়ে আনে?
ঘটনাবলী সাক্ষ্য দেয় : কল্যাণ আসে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের সংশ্লিষ্ট পুঁজির, দেশটির জনসাধারণের কল্যাণ হয় না। নাইজেরিয়া বিষয়ে আরো তথ্য সে সত্যই প্রকাশ করে। আগামীতে এমন আরো তথ্য পাওয়া যাবে বুধবারেরই পাতায়।
ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৫০০ সালে বলেছিলেন, ‘সোনা হচ্ছে পৃথিবীর সেরা জিনিস।… আত্মাকে উড়িয়ে স্বর্গে পাঠানোর কাজেও তা ব্যবহার করা যায়।’ আজ তেল যেন পাখা পেয়েছে। সে পাখাতেই ভর করে তেল ব্যবসায়ীরা উড়ে চলেছে মুনাফা গগনের ওপরে, আরো ওপরে।
রাজনীতিকে লেনিন বলেছিলেন, অর্থনীতির ঘনীভূত রূপ। উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য সেটা দেখিয়ে দেয়। আদার বেপারি জাহাজের খোঁজ নেয়া অবান্তর মনে হলেও তেল বেপারীর রাজনীতির খোঁজ নেওয়া খুব জরুরি। কারণ রাজনীতির হালচাল তাদের ব্যবসার অনেক দিকই নির্ধারণ করে। তাই রাজনীতিকে পছন্দমতো কাজে লাগাতে তেল বেপারীরা রাজনীতিবিদদের, আইন প্রণেতাদের বা আইনসভা সদস্যদের দলে ভেড়াবে, তাতে আশ্চর্যের কোনো কারণ নেই। এ বেপারীরা আসলে বিশাল সব বহুজাতিক করপোরেশন, দানবতুল্য। এদের ব্যবসার জগতে সব আছে, এক সঙ্গে মিলেমিশে : ব্যবসা, কারখানা, খনি, পরিবহন, ব্যাংক, বিনিয়োগ। জন কেনেথ গলব্রেথ ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত দ্য নিউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টেট নামের বইতে লিখেছিলেন : ‘প্রযুক্তিগত দিক থেকে গতিময়, বিপুল পুঁজি সমৃদ্ধ, খুবই সংগঠিত কয়েকশ’ করপোরেশনের’ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্বের উৎপাদনের বিশাল অংশ, তা বেড়ে চলেছে। এ বছরেই ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে ওয়ার/পিস রিপোর্টে ‘এমার্জিং নিউ ওয়ার্ল্ড পাওয়ার : দ্য ওয়ার্ল্ড করপোরেশন’ শিরোনামের প্রবন্ধে এ বারবার লিখলেন : চারশ’ থেকে পাঁচশ’ বহুজাতিক করপোরেশন এক প্রজন্মের মধ্যে গোটা পৃথিবীর স্থির সম্পদের মোটামুটি দু-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করবে।
আজ নাইজেরিয়ায় তেল নিয়ে যা কিছু কারবার, তা সে তেল আহরণ, শোধন, পরিবহন হোক বা সে সব পছন্দ মতো করার জন্য রাজনীতি, নির্বাচন, আইনসভা, সরকার, নানান দল-উপদল গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করা বা নিয়ন্ত্রণ করাই হোক, সব ক্ষেত্রে হাত রয়েছে এসব ব্যবসাদারের, বহুজাতিক করপোরেশনের, যাকে সংক্ষেপে বলা যায় বক।

No comments:

Post a Comment