তেল, গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক
সম্পদ নিয়ে লোভের শেষ নেই। তাই শেষ নেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার। আর এ
প্রতিদ্বন্দ্বিতা-প্রতিযোগিতা প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
রক্তপাতের অন্যতম কারণ। উইকিলিকস নাইজেরিয়ার তেলসম্পদ নিয়ে বহুজাতিক
কোম্পানিগুলোর (বক) বিশেষ করে শেল অয়েলের তৎপরতা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্র
দূতাবাসের যেসব তারবার্তা ফাঁস করে দেয়, সেগুলো থেকে বকদের তীক্ষ্ম নজর,
তৎপরতার ব্যাপ্তি ও গভীরতার ব্যাপার-স্যাপার কিছুটা অনুমান করা যায়।
প্যাট্রিক মার্টিন ‘উইকিলিকস ডকুমেন্টস শো শেল অয়েল ডমিনেশন অব নাইজেরিয়া’
নিবন্ধে এসব তারবার্তার কিছুটা তুলে ধরেছেন। এমনই এক তারবার্তা থেকে দেখা
যায়, শেল অয়েলের আফ্রিকা বিষয়ক নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এন পিকার্ড রুশ
তেল-গ্যাস কোম্পানি ন্যাজপ্রম সম্পর্কে মার্কিনি কর্তাদের জানাচ্ছেন যে,
ব্রিটিশ সরকারের ভেতরে থেকে যারা তাকে তথ্য দেন, তারা পিকার্ডকে বলছেন,
নাইজেরিয়া রুশ কোম্পানিটিকে ১৭ ট্রিলিয়ন বা ১৭ লাখ কোটি ঘন ফুট প্রাকৃতিক
গ্যাস দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটা করতে হলে অন্যান্য কোম্পানিকে এখন
যতটুকু দেওয়া হয়েছে, তা কমাতে হবে। পিকার্ড অনুমান ব্যক্ত করেন, এর প্রধান
ধাক্কা এসে পড়বে শেল অয়েলের ওপর।
মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে আরেকটি সভা
হয় পিকার্ডের, ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ সভায় পিকার্ড নাইজেরিয়া সরকারের
মধ্যে দুর্নীতির ব্যাপ্তি নিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তেল
ক্রেতাদের বিশাল অংকের ঘুষ দিতে হয় নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল
কোম্পানি নাইজেরিয়ান ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, এমনকি ফার্স্ট লেডি তুরাই
ইয়ারআদুয়াকে। তারবার্তায় বলা হয় : পিকার্ড আরো জানান, এটর্নি জেনারেল
এগুনডোয়াকা একটি দলিল সই করতে ঘুষ নিয়েছেন দু’কোটি ডলার।
পিকার্ডের মার্কিন দূতাবাস কর্তাদের
সঙ্গে দেখা করার তাৎক্ষণিক একটি কারণ ছিল। সে কারণটি হচ্ছে- বনিতে শেল
অয়েলের তেল প্লাটফর্মে তেল ভর্তি করছিল তেলবাহী একটি জাহাজ। সেই তেলবাহী
জাহাজে বা ট্যাংকারে সশস্ত্র সংগঠনের কর্মীরা হামলা চালায়। এ ঘটনাটিই ছিল
তেল কর্তা আর কূটনীতিকদের সাক্ষাতের কারণ। এর আগে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে
একটি তেল কোম্পানির ওপর ১৪ দফা হামলা হয়, এটা ছিল নাইজেরিয়ায় নিরাপত্তা
ব্যবস্থা সার্বিকভাবে ভেঙে পড়ারই অংশ। এসব বিষয় উল্লিখিত নিবন্ধে বলা
হয়েছে।
তারবার্তাটিতে আরো উল্লেখিত হয়েছে যে,
মার্কিন রাষ্ট্রদূত অভ্যুত্থানের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে শেল অয়েলের ভাবনা
জানতে চান। জবাবে পিকার্ড বলেন, একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করা ও তা
রূপায়ন করার মতো বুদ্ধিবৃত্তিগত ক্ষমতা নাইজেরিয়ায় সামান্যই আছে। শেল
অয়েলের দৃষ্টিতে এ ধরনের সম্ভাবনা অল্প।
এরপর তারা দু’জন নাইজেরিয়ার
প্রেসিডেন্ট ইয়ারআদুয়ার শরীরের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। পরের বছর
ইয়ারআদুয়া মারা যান। তার স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট গুডলাক জনাথন।
দূতাবাসের আরেকটি তারবার্তায় প্রেসিডেন্ট ইয়ারআদুয়ার স্ত্রীর ঘুষ,
চোরাচালানি ও অন্যান্য ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকার অসমর্থিত খবরের কথা
উল্লেখ করা হয়। ইয়ারআদুয়ার স্ত্রী লন্ডনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এক কোটি ডলার
দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন। সংবাদ প্রদানের একটি সূত্র দূতাবাস কর্তাদের জানায়,
প্রেসিডেন্ট ইয়ারআদুয়া নিজে ঘুষ নিচ্ছেন না; তবে তার স্ত্রী ব্যক্তিগত
ব্যবহারের জন্য সরকারি তহবিলের লাখ লাখ টাকা সরাচ্ছেন।
আরেকটি তার বার্তায় মার্কিন
রাষ্ট্রদূত স্যান্ডার্স ও গুডলাক জনাথনের মধ্যে একটি বৈঠকের বিবরণ রয়েছে। এ
বৈঠকটি হয় ২০১০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। জনাথন তখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।
সৌদি আরব থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়ারআদুয়া তখন অপ্রত্যাশিতভাবে দেশে ফিরে
এসেছেন। তার এ প্রত্যাবর্তনের কারণে তড়িঘড়ি করে অপ্রত্যাশিতভাবে এ বৈঠকের
আয়োজন করা হয়েছিল। সৌদি আরবে চিকিৎসাকালে তিনি প্রায় মৃত্যুর মুখে পৌঁছে
গিয়েছিলেন। ইয়ারআদুয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য জনাথনের রাজনৈতিক
পরিকল্পনা কেমন, তার একটি বিবরণ জনাথন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান। এ
পরিকল্পনায় জনাথনের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হওয়া, মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া ও
নতুন করে নির্বাচন করার বিষয়গুলোও স্থান পায়। সাবেক প্রেসিডেন্টদের ও
সামরিক শাসকদের সঙ্গে জনাথনের যেসব শলাপরামর্শ হয়, সেগুলোর পূর্ণ বিবরণও
জনাথন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান। এসব শলাপরামর্শ হয়েছিল ইয়ারআদুয়ারকে
পদত্যাগে রাজি করানোর পন্থা নিয়ে।
দেশটির শাসকবর্গের মধ্যে উত্তর ও
দক্ষিণের হিসেবে বিভাজন বা আঞ্চলিক ভিত্তিতে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার বিপদ
সত্ত্বেও এ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জনাথনকে উৎসাহ যোগান মার্কিন
রাষ্ট্রদূত। এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ২০১১ সালের প্রস্তাবিত নির্বাচনে
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনকে ‘কারিগরি সহায়তা’ দেওয়ার সুযোগ প্রদানে রাজি হন।
ক্ষমতার প্রকৃত সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদূত
স্যান্ডার্স তখন নির্বাচন কমিশনের প্রধানকে সরিয়ে ফেলা হবে মর্মে আশ্বাস
দাবি করেন। নির্বাচন কমিশন প্রধানকে ‘আগামী মাসের মধ্যে’ সরানোর
প্রতিশ্রুতি দেন জনাথন। এসব তথ্য দিয়েছেন প্যাট্রিক মার্টিন উইকিলিকসের
বরাত দিয়ে।
এসব তেল-গ্যাস কোম্পানির বকদের
ক্ষমতা-প্রতিপত্তি-হস্তক্ষেপ যে কত প্রবল, কত ব্যাপক বিস্তৃত, কত গভীরে
প্রোথিত তা এসব বার্তা থেকে বুঝতে পারা যায়। ব্রিটেনের দৈনিক পত্রিকা
গার্ডিয়ানে এসব তারবার্তার যে খবর প্রকাশিত হয়, তার শিরোনাম ছিল ‘উইকিলিকস
কেবলস : শেলস গ্রিন অন নাইজেরিয়ান স্টেট রিভিলড’ অর্থাৎ ‘উইকিলিকসের ফাঁস
করা তারবার্তা : নাইজেরিয়া রাষ্ট্রের ওপর শেল কোম্পানির বজ্রমুষ্ঠি প্রকাশ
হয়ে পড়েছে।’ এ শিরোনামের নিচেই বড় হরফে লেখা হয় : মন্ত্রণালয়গুলোর
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে কোম্পানি ‘সবই জানে’ বলে উচ্চপর্যায়ের
কোম্পানি কর্তার দাবি প্রকাশ করে দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো
তারবার্তাগুলো। এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয় : তেল দানব শেল দাবি করেছে যে,
নাইজেরিয়ার সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কোম্পানিটি কর্মী ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ফলে রাজনীতিবিদদের সব কাজকর্মের খবর পায় শেল। এসব মন্ত্রণালয়ের সবই জানে
শেল। নাইজেরিয়া সরকার ভুলে গেছে যে, শেল অয়েলের অনুপ্রবেশ কত গভীরে।
নাইজেরিয়া সরকারের কাজকারবার সম্পর্কে শেল কত বেশি জানে, সে ব্যাপারে
নাইজেরিয়া সরকার অসচেতন।
গার্ডিয়ানের এ খবরে বলা হয়, এই
অ্যাংলো-ডাচ বা ইঙ্গ-ওলন্দাজ কোম্পানি, অর্থাৎ শেল গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়
করে যক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। একবার এ কোম্পানি মার্কিন কূটনীতিকদের দেয়
নাইজেরিয়ার সেইসব রাজনীতিকের নাম, যারা সশস্ত্র গ্রুপ সদস্যদের মদদ দেন বলে
সন্দেহ করা হয়। চীনকে লেখা নাইজেরিয়া সরকারের চিঠিটি শেল কিভাবে পেয়েছে,
সে বিবরণ দেন শেল কর্তা পিকার্ড মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্যান্ডার্সকে। পিকার্ড
বলেন, নাইজেরিয়ার পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী ওদেইন আজুমোহগাবিয়া এ ধরনের
চিঠি পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু শেল জানে, চীন ও রাশিয়াকে
নাইজেরিয়া এমন চিঠি লিখেছে, এসব চিঠিতে তেল বিষয়ে বিড বা প্রতিযোগিতায় অংশ
নেওয়ার জন্য চীন ও রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
উইকিলিকসের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের এ
খবরে বলা হয়, শেল কর্তা পিকার্ড সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাজপ্রম
সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ গোপন খবর দেওয়ার জন্য মার্কিন কনসুলেটকে অনুরোধ করে।
পিকার্ড অভিযোগ করেন, নাইজেরিয়ার এক মন্ত্রীর সঙ্গে তার আলাপের বিবরণ
রুশরা গোপনে রেকর্ড করে এবং মন্ত্রীর দফতরে এ সভার অল্পক্ষণ পরেই পিকার্ডের
অফিসে ‘রুশদের কাছ থেকে’ সে সভার একেবারে হুবহু বিবরণ পৌঁছায়। এই শেল
কর্তা বার বার মার্কিন কর্তাদের বলেন, তিনি মার্কিন সরকারি কর্তাদের সঙ্গে
আলাপ করতে চান না; কারণ মার্কিন সরকারে ‘ছিদ্র’ রয়েছে। পিকার্ড উদ্বিগ্ন
যে, নাইজেরিয়ায় শেল অয়েলের অপারেশন বা কাজকারবারের খারাপ খবর ফাঁস হয়ে
যাবে।
এসব তার বার্তায় ফাঁস হওয়া খবর
সম্পর্কে শেল গার্ডিয়ান পত্রিকার কাছে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করে।
নাইজেরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে প্রবলভাবে এসব তথ্য অস্বীকার করে বলা হয়, শেল
নাইজেরিয়া সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে না, কখনো করেনি, এগুলো হচ্ছে সরকারকে খাটো
করার চেষ্টা।
তবে নানা অধিকার প্রশ্নে যারা আন্দোলন
করেন, তারা বলেছেন, এসব তথ্য নাইজেরিয়ার তেলসম্পদের ওপর শেল অয়েলের
বজ্রমুষ্ঠির প্রমাণ। সোশ্যাল অ্যাকশন নাইজেরিয়া নামে একটি সংগঠনের একজন
নেতা বলেন, শেল আর নাইজেরিয়া সরকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। শেল আছে সব
জায়গায়। নাইজেরিয়ার সব মন্ত্রণালয়ে তাদের একটি চোখ, একটি কান আছে। প্রত্যেক
বসত এলাকায়, প্রত্যেক পেশাজীবী গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে তাদের টাকা খাওয়া
কর্মী। এ কারণেই তারা সব কিছু থেকে রেহাই পেয়ে যায়। নাইজেরিয়া সরকারের চেয়ে
শেল বেশি ক্ষমতাধর। তেল সংক্রান্ত ঘটনাবলীর ওপর নজর রাখে, লন্ডনে এমন একটি
সংগঠনের কর্মকর্তাও একই ধরনের মন্তব্য করেন বলে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়।
বেন আমুনওয়া নামের এ কর্মকর্তা বলেন, শেল দাবি করে, নাইজেরিয়ার রাজনীতি
নিয়ে শেল অয়েলের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু বাস্তবে ব্যবস্থাটির গভীরে
ঢুকে কাজ করে শেল। শেল নিজের সুবিধার জন্য নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক চ্যানেলগুলো
দীর্ঘকাল ধরে কাজে লাগাচ্ছে।
উইকিলিকসের ফাঁস করা একটি তার বার্তায়
বলা হয়, শেল কর্তা পিকার্ড বলেন, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য
হচ্ছে অনুমানের খেলা। সাম্প্রতিককালে প্রেসিডেন্টর সঙ্গে পিকার্ডের যে সব
বৈঠক হয়েছে, সেগুলোতে প্রেসিডেন্টকে দেখা গেছে সজাগ। তবে তাকে দেখায় ক্ষীণ।
পিকার্ডের কাছে তথ্য রয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট শিগগিরই মারা যাওয়ার বিপদের
মধ্যে নেই। আবার তিনি পুরোপুরি সুস্থও হয়ে উঠবেন না। পিকার্ড জানান,
পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী ড. লুকমানের সঙ্গে শেলের একটি পূর্বনির্ধারিত সভা
বাতিল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অজুহাত দেখানো হয়েছে যে, মন্ত্রীকে
প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে। দূতাবাসের কর্তারাও দেখেছেন,
মন্ত্রীদের ও ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক প্রায়ই বাতিল করা হয়। এসব
ক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয় যে, তাদের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ডেকে পাঠানো
হয়েছে। অথচ দূতাবাস জানে, সে সময়ে প্রেসিডেন্ট নগরেই ছিলেন না, মার্কিন
কর্তারা ও পিকার্ড গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এসবের
মধ্যে ছিল গ্যাস আহরণ, গ্যাস বণ্টন অবকাঠামো ইত্যাদি। প্রেসিডেন্ট আবুজায়
তার বাসভবনে আর ফিরে আসবেন কি-না, তার বাসভবন থেকে তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র
সরানো হচ্ছে। এ বিষয়ও আলোচনা স্থান পায়। নাইজেরিয়ার কোনো কোনো মন্ত্রী ও
সরকারি কর্মকর্তার নিয়োগ, কারো কারো লেখাপড়ার বিষয়, শিক্ষা লাভের
প্রতিষ্ঠান, মানসিকতা, জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনা কালের অভিজ্ঞতা, গ্যাসকে
মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর গুরুত্ব প্রদান, কোন উপমন্ত্রীকে কোন মন্ত্রী
প্রভাবিত করতে পারবেন, জাতীয়তাবাদীমুখী ও শ্যাভেজের মতো শব্দগুচ্ছ কার
প্রিয়, কাকে পেট্রোলিয়াম খাতে ‘সঠিক’ পথে চলানো যায়, এসব প্রসঙ্গও এ বৈঠকে
আলোচিত হয় বলে একটি তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়।
এমন একেকটি তারবার্তার পূর্ণ বিবরণ
স্থানাভাবে দেওয়া সম্ভব নয় এখানে। যে কোনো মনোযোগী পাঠককে সে সব তার বার্তা
স্তম্ভিত করে দেয়, তেল-গ্যাস সংশ্লিষ্ট এসব কোম্পানির তীক্ষ্ণ, গভীর,
বিস্তৃত দৃষ্টি; গভীর ব্যাপক প্রভাব, হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ; পরিকল্পনার
সুদূরপ্রসারী খুঁটিনাটি সব বিবেচ্য বিষয়গুলোর কারণে স্তম্ভিত হতে হয়। এখন এ
সব কোম্পানির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো পক্ষগুলোকে শিশু-কিশোর সুলভ
বিপক্ষের কার্যাবলীকে কিশোরসুলভ চপলতা, বিপক্ষের বিশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের
ধরনকে একেবারেই ভাসাভাসা বলে কোনো পাঠকের মনে হতে পারে।
এসব তার বার্তার মধ্য দিয়ে কেবল তেল ও
গ্যাসের প্রসঙ্গ প্রকাশিত হয়নি। রাজনীতি, রাজনীতিবিদ, রাজনীতিকদের জীবন,
সংশ্লিষ্টদের লেখাপড়া, নানা বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্কও ফুটে উঠেছে। কোনো কোনো
তৎপরতা যে পুরোমাত্রায় গোয়েন্দাবৃত্তির পর্যায়ে পড়ে, সেটাও চোখ এড়ায় না।
এসব তারবার্তা থেকে বুঝতে পারা যায়, কেবল রাজনীতিবিদরাই রাজনীতি করেন না;
এসব কোম্পানিও রাজনীতি করে; কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কোম্পানি রাজনীতিবিদদের
ওপর দিয়ে রাজনীতি করে; রাজনীতির আসল কলকাঠি নাড়ে; সেসব তৎপরতার ক্ষেত্রে
একটি দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কোম্পানির হাতে ধরা কল মাত্র। সে
বিবেচনায় এসব কোম্পানিকে সারার্থে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বললে ভুল হবে না।
দেশের সাধারণ মানুষ কি রাজনীতির এসব ছলাকলা-লেনদেন-বোঝাপড়ার খবর জানেন?
দেখা যাবে জনসমক্ষে রাজনৈতিক বোলচাল নেহাতই বোলচাল, তার বেশি কিছু নয়;
রাজনীতির আসল খেলা চলে অন্দর মহলে, সে খবর কদাচিৎ পৌঁছায় মূক-নিরক্ষর
জনসাধারণের কাছে।
এর ফলাফল কি দাঁড়ায়? হস্তক্ষেপ,
মোচড়ামুচড়ি, হাসাহাসি, ব্যবসার স্বার্থ হাসিলে রাজনীতিতে ছড়ায় সংঘাত। এত
বিশ্লেষণ, পরিকল্পনা, হস্তক্ষেপ রাজনৈতিক-কূটনৈতিক কাজ কারবার কেন? মুনাফার
উদ্দেশ্যে। তেল আর গ্যাস মুঠোয় না এলে কাঙ্ক্ষিত বা স্বপ্নের মুনাফা হবে
না।
No comments:
Post a Comment