নাইজেরিয়ায় তেলের বা তেল নিয়ে নানা
কর্মকান্ডের কথা এলে গ্যাসের প্রসঙ্গও আসে, যেমন কান টানলে আসে মাথা।
নাইজেরিয়ার তেল সমৃদ্ধ নাইজার বদ্বীপ অঞ্চল সম্পর্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন
কর্মসূচির মানব উন্নয়ন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের একটি অংশে উল্লেখ করা হয়
গ্যাস বেরিয়ে পড়া ও গ্যাস পুড়ে তৈরি আগুনের লেলিহান শিখার প্রসঙ্গটি। এতে
বলা হয় নাইজার অঞ্চলে ভূমির ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে পড়ে, এমন প্রমাণ
রয়েছে। সে অঞ্চলের কোনো কোনো জলাভূমিতে বুদ্বুদ দেখা যায়; অর্থাৎ এর আবার
আরেকটি অর্থ রয়েছে। সেটা হচ্ছে হাইড্রোকার্বন হয় তো পানিতে থাকা প্রাণে
প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে, তার পরে তা বেরিয়ে আসছে বায়ুমন্ডলে। বেরিয়ে আসা ও
বায়ুমন্ডলে মিশে যাওয়া হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ অজানা।
আবার বিশ্ব ব্যাংকের ২০০৫ সালের এক
প্রকাশনায় অনুমান ব্যক্ত করা হয় যে, স্থানীয় বাজার ও অবকাঠামো না থাকায়
নাইজেরিয়ায় ৭৫ শতাংশ গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা হয়। বিশ্বব্যাংকের এ অনুমান
উল্লিখিত হয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ওই প্রতিবেদনে। এভাবে গ্যাস পুড়িয়ে
ফেলায় অক্সাইড অব কার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার
অক্সাইড প্রভৃতি উপাদানও বাতাসে মিশে যায়। গ্যাস এভাবে পোড়ানোর ফলে এসিড
রেইন বা অম্ল বৃষ্টিও একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ করা দরকার যে, অম্ল বৃষ্টি হলে
গাছ, দালানকোঠা ও প্রাণের ক্ষতি হয়। গ্যাস এভাবে পুড়িয়ে না ফেলার জন্য তেল
শিল্পের বড় বড় কোম্পানি নানান পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। তেল আহরণে ব্যবহার
করা বিভিন্ন সরঞ্জাম ও যন্ত্রও অম্ল বৃষ্টির কারণ। গ্যাস কতটুকু, কিভাবে
পোড়ানো হবে, সে ব্যাপারে নাইজেরিয়ায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সে সব
আইন লঙ্ঘনের আর্থিক দন্ডও নির্ধারিত আছে। তবে সেসব আর্থিক দন্ডের পরিমাণ এত
কম যে, তা আইন লঙ্ঘনে নিরুৎসাহিত করে না। গ্যাস পোড়ালে বায়ু ও তাপ দূষণ
ঘটে; তা নষ্ট করে প্রাণবৈচিত্র্য। এছাড়া পুড়িয়ে ফেলা গ্যাসের দামও
উল্লেখযোগ্য। এ ক্ষতি বিপুল। গ্যাস পোড়নোর সময় শব্দ হয়। তাপ বৃদ্ধি পায়।
বেড়ে চলা তাপ মেরে ফেলে উদ্ভিদ, গুল্মলতা এবং বাধাগ্রস্ত করে উদ্ভিদের
বৃদ্ধিকে। তা ফুল-ফল ধরার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, কৃষি ফলন কমায়। যেখানে গ্যাস
পোড়ানো হয়, তার চারপাশে মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ দিন-রাত অবিরাম
আলোর মধ্যে থাকে। অবিরাম আলো সবার জন্যই ক্ষতিকর। কেবল মানুষ ও প্রাণীরই নয়
উদ্ভিদেরও কিছু সময় অাঁধার দরকার, প্রয়োজন বিশ্রাম কাল। এত আলো, এত তাপ,
অবিরাম এ যাতনা পাখিদেরও ক্ষতি করে। আর মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্য দরকার
উদ্ভিদ, পাখি, নানা প্রাণী মিলে এমন এক জগত, যে জগতে আছে প্রাণবৈচিত্র্য।
মাটি দেবে যায় :
তেল-গ্যাস আহরণের সঙ্গে এক শ্রেণীর অর্থনীতিতে জড়িত বণ্টনে বৈষম্য, লুট
ছাড়াও এ আহরণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা হচ্ছে মাটি
দেবে যাওয়া।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মান উন্নয়ন
সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনে বলা হয় : তেল ও গ্যাস বিপুল পরিমাণে আহরণ করলে মাটি
দেবে যায়। তবে এ ব্যাপারে এখনো যা আভাস-সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা
সামান্য। মাটি দেবে যাওয়ার সংশয় দেখা গেছে গুনডো অঙ্গরাজ্যের মোলুকে ও
রিভারস অঙ্গরাজ্যের বনিত এবং বদ্বীপ অঞ্চলের কয়েকটি জায়গায়।
এ প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদনে উল্লৈখ করা
হয়- যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি বদ্বীপ অঞ্চলের কথা। সেখানে তেল ও গ্যাস
আহরণের ফলে মাটি দেবে গেছে। মাটি দেবে গেলে ধারেকাছে নদীতীর, সাগরের
বেলাভূমিতে ভাঙন বেড়ে যায়। নদীতীর-সাগরতটে ভাঙন বৃদ্ধির একটি ফলাফল
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও স্রোত প্রবল হওয়া, এ ব্যাপারে কোনো সংশয়
নেই। তবে এটাও বাস্তব যে, তেল ও গ্যাস আহরণ কাজে চলাচল ও যন্ত্রপাতি
আনা-নেওয়া সহজ করার জন্য খাল কাটা, সমুদ্রতট দিয়ে পাইপ বসানো, জেটি তৈরি,
ইত্যাদি কাজের কারণেও তীরতট ভাঙন বেড়েছে।
এ ধরনের কাজ কারবারের ফলে যে সব ক্ষতি
হয়, তার উদাহরণ দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওনডো অঙ্গরাজ্যে আউয়েতে এক তেল
কোম্পানি একটি খাল কাটে। এ খাল কাটার উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির কাজ সহজ করা।
অর্থাৎ চলাচল ও পরিবহন স্বচ্ছন্দ করে তোলা। কিন্তু সে খাল দিয়ে ঢুকে পড়ে
নোনা পানি। তাতে ক্ষতি হয় ২০ হেক্টরেরও বেশি পরিমাণ জমির। আরেক তেল
কোম্পানি ডেল্টা অঙ্গরাজ্যে তাদের স্থাপনা থেকে উপকূল পর্যন্ত পাইপ বসায়।
আর সে কাজের ফল দাঁড়ায় প্রতিবেশ নষ্ট, নোনা পনির প্রবেশ, তট ভাঙন।
প্রাণ কি বাঁচে এভাবে, মানুষের জীবন
ধারণ কি সহজ হয় এভাবে? না কি জীবন ধারণ হয়ে পড়ে কষ্টকর? এ সব প্রশ্ন ভেবে
দেখা দরকার নয় কি? এসব কান্ড দেখে যদি কারো মনে হয় যে, গ্যাস বোধ হয় উৎপাত,
তা হলে ভুল হবে কি?
বন ধ্বংস : তেল-গ্যাস
অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য অনেক সময়ই বনের ভেতরে ঢুকতে হয়। কারণ হয় তো
সেখানে মাটির নিচে রয়েছে তেল খনি বা গ্যাস ক্ষেত্র। বনে ঢোকার জন্য পথ তৈরি
করতে হয়। তখন সে পথ গাছ চোরদের চলাচল সহজ করে দেয়। বেড়ে যায় গাছ চুরি,
ধ্বংস হয় বন। এছাড়াও তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং আহরণের কাজে বন ধ্বংস হয়।
বন অঞ্চলে এসব কাজ করার জন্য তৈরি করতে হয় নানান ধরনের স্থাপনা, পাততে হয়
পাইপ, বসাতে হয় নানা যন্ত্রপাতি। এতে ধ্বংস হয় বনের সঙ্গে প্রাণবৈচিত্র্য।
প্রাণবৈচিত্র্য ছাড়া বনের কথা কল্পনা
করা যায় কি? গাছপালা, লতাগুল্ম, শ্যাওলা, ছত্রাক- এসবের ওপর নির্ভর করে
থাকা নানা প্রাণী যেমন জীবজন্তু, পাখি, কীট, পতঙ্গ, ছাড়া কল্পনা করা যায় কি
বন? সে বন ধ্বংস হলে? নাইজেরিয়ায় তেলসমৃদ্ধ এলাকায় এমন ধ্বংসের ঘটনাই
ঘটেছে। আর বন যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট করার জন্য সামান্য কিছু তথ্য
উল্লেখ করা যায়। জন বেলামি ফস্টার দ্য ভালনারেবল প্লানেট একটি ইকোনমিক
হিস্টরি অব দ্য এনভায়রনমেন্ট (বিপন্ন পৃথিবী, পরিবেশের সংক্ষিপ্ত অর্থনৈতিক
ইতিহাস নামে ঢাকায় সাহিত্য প্রকাশ বইটি প্রকাশ করেছে) বইতে লিখেছেন অনুমান
করা হয়, বর্তমান বিশ্বে তিন কোটি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে যৎসামান্য ১৪
লাখ প্রজাতিকে চিহ্নিত এবং এ সবের তথ্য তালিকাভুক্ত করা গেছে। একটি প্রজাতি
হারিয়ে যাওয়ার অর্থ… প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশের ধারা বিষয়ক তথ্য সম্ভার
হারিয়ে যাওয়া। আর এসব তথ্য নতুন খাদ্য, ক্যান্সার মোকাবিলার নতুন ওষুধ ও
অন্যান্য সামগ্রীর সন্ধান দিতে পারে। মানব জাতি বর্তমানে তার খাদ্য
সরবরাহের ৮০ শতাংশের জন্য মাত্র ২০টি প্রজাতির ওপর নির্ভর করে। অথচ এখনো
খাবার যোগ্য প্রায় ৭৫ হাজার প্রজাতির গাছপালা রয়েছে বলে জানা যায়। এসবের
পুষ্টিমানও বিপুল…। মাত্র কয়েক বছর আগে প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম
অঞ্চলে প্যাসিফিক ইউ গাছকে মনে করা হতো যে, এগুলো ‘আগাছা’। যারা বন কাটতো,
তারা এ গাছ পুড়িয়ে ফেলত, আজ জানা গেছে, এ গাছ হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক
উপাদানের উৎস। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত যত ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে,
সেগুলোর মধ্যে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া
ঘটে জনসাধারণের জীবনে। পরিবেশ নষ্ট হলে সাধারণ মানুষের টিকে থাকা হয়ে ওঠে
দুঃসাধ্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমাজের নিচের দিকে থাকা মানুষের
বঞ্চনা বেড়ে চলে।
নাইজেরিয়ায় অধিকাংশ তেল স্থাপনায়
বর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে তেল শিল্পের তৈরি বর্জ্য পড়ে
মাটিতে, জলে, বনে, সাগরে, জলায়। এর পরিণতি ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশের ক্ষেত্রে উল্লেখ
করার মতো বিধিবিধান না মেনে ৩০ বছরের বেশি কাজ চালিয়েছে তেল কোম্পানিগুলো।
বিশেষ করে শেল। পরিবেশ রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাটি গঠন করা হয় ১৯৮৮
সালে। তবে বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ ও আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে মান এবং বড় ধরনের
সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিবেশ নিরূপণের প্রয়োজন সংক্রান্ত আইন নববইয়ের
দশকের গোড়ার আগে পর্যন্ত প্রণীত হয়নি। কিন্তু ততদিনে নাইজার বদ্বীপ অঞ্চলের
ক্ষতি হয়ে গেছে বিপুল। এমনকি, তেল কোম্পানিগুলোর কাজ-কারবার ঠিক মতো
দেখাশোনার সামর্থ্য সে দেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর আছে কিনা তা
নিয়েও সংশয় রয়েছে। দেখা গেছে, এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর
চেয়ে তেল কোম্পানিগুলোর সামর্থ্য ও সুবিধা বেশি। কোম্পানিগুলোর হাতে রয়েছে
ভালো মানের ও হালনাগাদ তথ্য সংবলিত মানচিত্র, উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা ছবি,
দূর ধাবন প্রযুক্তি, উন্নত কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাবলী। পরিবেশ
সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের, বিশ্লেষণের ও উপস্থাপনের জন্য উন্নত
কম্পিউটার ইত্যাদি দরকার হয়।
এ প্রতিবেদনেই বলা হয়, সংশ্লিষ্ট
সরকারি সংস্থাগুলোর সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি এত অপ্রতুল, এত সেকেলে যে, স্থানীয়
জনসাধারণের চোখেই তা ধরা পড়ে। তারা দেখেন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর (বক)
সুউন্নত সূক্ষ্ম প্রযুক্তি, কর্মকৌশল। তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন বকদের দেখে;
তারা মনে করেন না যে, সরকারি সংস্থাগুলো জনসাধারণকে রক্ষা করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রণীত নানান আইন, বিধিবিধানে কারাদন্ড,
অর্থদন্ডসহ নানান দন্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় জনসাধারণের
অভিযোগ, তারা এসব আইন বলবত হতে দেখেননি।
আবার দেখা গেছে, অর্থ দন্ডের যে
পরিমাণের কথা আইনে উল্লেখিত হয়েছে, সে পরিমাণ অর্থদন্ড মুদ্রাস্ফীতির
বিবেচনায় ন্যায়পর নয়। আর নাইজেরিয়াকে মুদ্রাস্ফীতিপ্রবণ দেশ বললে ভুল বলা
হবে না। এ মন্তব্যও ওই প্রতিবেদনের। এতে বেশ কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বলা হয়,
পরিবেশ সংক্রান্ত ক্ষতির ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে
যা পেয়েছে সেটা যৎসামান্য। পরিবেশ ক্ষতি বিষয়ে মামলা চলে দীর্ঘসময় ধরে- এমন
উদাহরণ রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালত ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ
প্রদানের আদেশ দেয়, সেটা ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি করা অর্থের পরিমাণের চেয়ে কম।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলার রায় যায় তেল কোম্পানির পক্ষে। এর কারণ হিসেবে
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ তেল দূষণের ফলে দায়ের মাত্রা ও ক্ষতি নিরূপণের ব্যবস্থা না
থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ : নাইজেরিয়ায়
তেল কোম্পানিগুলোর রয়েছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অনেক ঘটনা। এমনকি প্রতিশ্রুতি
কার্যকরভাবে পালিত না হওয়ার উদাহরণও অনেক। এক গ্রামের নাম ফিশ টাউন- মাছ
শহর। গ্রামে কেবল কাঁচা ঘর, বসত গ্রামবাসীদের। শেভরণ টেক্সাকো বলেছিল,
গ্রামে স্কুলের জন্য দালান, গ্রামবাসীদের সভা-সমিতি করার জন্য একটি হল,
বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানির কূপের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তৈরি করে দেওয়া হয়েছে
কেবল একটি জেটি, নৌকাঘাটা। শ্বেতহস্তি প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে যেমন ঘটে, সে
নৌকাঘাটার ক্ষেত্রেও হলো তাই। তা হয়ে পড়ে অকেজো। কয়েক বছরের মধ্যে ভাঙন
নৌকাঘাটাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে মূল ভূমি থেকে। এ গ্রামেরই কাছে আরেক গ্রাম,
নাম তার সানগানা। শেভরন টেক্সাকো ও কোম্পানিটির শরিকরা সেখানে ২০০১ সালে
হাসপাতাল তৈরি করে দেয়। কিন্তু সেখানে নেই কোনো ডাক্তার, নেই কোনো ওষুধ। এ
তথ্যও ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত হয়েছে।
এ যেন প্রতিশ্রুতির খেলা। আর খেলা সাধারণ মানুষকে নিয়ে। এ খেলা কেবল নাইজেরিয়ায়, তা নয়। এ খেলা চলে প্রায় সব দেশে।
নানা দেশ থেকে তেলসহ নানা প্রাকৃতিক
সম্পদ লুট আর বিনিময়ে চাপিয়ে দেওয়া দারিদ্রে্যর দুর্ভোগের বিবরণ শেষ হওয়ার
নয়। এ বিবরণের রয়েছে নানা দিক। এর সঙ্গে জড়িত অনেক পক্ষ, অনেক কর্মকৌশল।
কেবল চুক্তির বিবরণ আর তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা লুটের প্রতারণার পন্থাগুলোর
বিবরণই দীর্ঘ। এখন সে সবে না গিয়ে অন্যান্য দেশে তেল-গ্যাস-প্রাকৃতিক সম্পদ
লুটের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। আগামীতে থাকবে এমন আরেক দেশের কথা।
No comments:
Post a Comment